পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ኃbrO রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার মুখ পিশাচীর মতো দেখিতে হইল। সম্মুখে একটি কাষ্ঠখণ্ড জ্বলিতেছিল, সেইটি তুলিয়া . লইল— হাত পুড়িয়া গেল, কিন্তু তাহা ফেলিল না— সেই জ্বলন্ত কাষ্ঠ লইয়া তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটিল। কিছুতে ধরিতে না পারিয়া সেই কাষ্ঠ তাহার প্রতি ছুড়িয়া মারিল। − ত্ৰিংশ পরিচ্ছেদ সীতারাম যুবরাজকে সঙ্গে করিয়া খালের ধারে লইয়া গেল । সেখানে একখানা বড়ো নীেকা বাধা ছিল, সেই নীেকার সম্মুখে উভয়ে গিয়া দাড়াইলেন । তাহাদের দেখিয়া নীেকা হইতে এক ব্যক্তি তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া আসিয়া কহিল, “দাদা, আসিয়াছিস ?” উদয়াদিত্য একেবারে চমকিয়া উঠিলেন— সেই চিরপরিচিত স্বর, যে স্বর বাল্যের স্মৃতির সহিত, যৌবনের সুখদুঃখের সহিত জড়িত পৃথিবীতে যতটুকু সুখ আছে, যতটুকু আনন্দ আছে, যে স্বর তাহারই সহিত অবিচ্ছিন্ন। এক-একদিন কারাগারে গভীর রাত্রে বিনিদ্রনয়নে বসিয়া সহসা স্বপ্নে বংশীধ্বনির ন্যায় যে স্বর শুনিয়া চমকিবা উঠিতেন- সেই স্বর । বিস্ময় ভাঙিতে না ভাঙিতে বসন্ত রায় আসিয়া তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিলেন । উভয়ের দুই চক্ষু বাম্পে পরিয়া গেল । উভয়ে সেইখানে তৃণের উপর বসিয়া পড়িলেন । অনেকক্ষণের পর উদয়াদিত কহিলেন, “দাদামহাশয়।” বসন্ত রায় কহিলেন, “কী দাদা!” আর কিছু কথা হইল না । আবার অনেকক্ষণের পর উদয়াদিত্য চারি দিকে চাহিয়া, আকাশের দিকে চাহিয়া বসন্ত রায়ের মুখের দিকে চাহিয়া আকুলকণ্ঠে কহিলেন, “দাদামহাশয়, আজ আমি স্বাধীনতা পাইয়াছি, তোমাকে পাইয়াছি, আমার আর সুখের কী অবশিষ্ট আছে ? এ মুহূর্ত আর কতক্ষণ থাকিবে ?” কিয়ৎক্ষণ পরে সীতারাম জোড়হাত করিয়া কহিল, “যুবরাজ, নীেকায় উঠেন ।” যুবরাজ চমক ভাঙিয়া কহিলেন, “কেন, নীেকায় কেন ?” সীতারাম কহিল, “নহিলে এখনই আবার প্রহরীরা আসিবে ।” বসন্ত রায় উদয়াদিত্যের হাত ধরিয়া কহিলেন, “ই ভাই, আমি তোকে চুরি করিয়া লইয়া যাইতেছি । এ যে পাষাণ-হৃদয়ের দেশ- এরা যে তোকে ভালোবাসে না । তুই হরিণ-শিশু এ ব্যাধের রাজ্যে বাস করিস, আমি তোকে প্ৰাণের মধ্যে লুকাইয়া রাখিব, সেখানে নিরাপদে থাকিবি ।” বলিয়া উদয়াদিত্যকে বুকের কাছে টানিয়া আনিলেন যেন তাহাকে কঠোর সংসার হইতে কাড়িয়া আনিয়া মেহের রাজ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখিতে চান | উদয়াদিত্য অনেকক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন, “না দাদামহাশয়, আমি পলাইতে পারিব না ।” বসন্ত রায় কহিলেন, “কেন দাদা, এ বুড়াকে কি ভুলিয়া গেছিস ।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “আমি যাই- একবার পিতার পা ধরিয়া কঁদিয়া ভিক্ষা চাই যে, তিনি হয়তো রায়গড়ে যাইতে সম্মতি দিবেন।” বসন্ত রায় অস্থির হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “দাদা, আমার কথা শোন— সেখানে যাস নে, সে-চেষ্টা दष्ट्र न्श्व्लि ।।” উদয়াদিত্য নিশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, “তবে যাই । আমি কারাগারে ফিরিয়া যাই ।” বসন্ত রায় তাহার হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিলেন, “কেমন যাইবি যা দেখি । আমি যাইতে দিব না ।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “দাদামহাশয়, এ-হতভাগ্যকে লইয়া কেন বিপদকে ডাকিতেছ। আমি যেখানে থাকি সেখানে কি তিলেক শান্তির সম্ভাবনা আছে ?” বসন্ত রায় কহিলেন, “দাদা, তোর জন্য যে বিভাও কারাবাসিনী হইয়া উঠিল । এই তাহার নবীন কল্পস কি তাহার সমস্ত জীবনের সুখ জলাঞ্জলি দিবে "বসন্ত বায়ের চােখ দিয়া জল পড়তে १व् ।