Ved 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী হত্যার পাপ সমস্ত যেন আমারই হয় ।” বলিয়া শিহরিয়া উঠিলেন । মহারানী যখন শুনিলেন উদয়াদিত্য কাশী চলিয়া যাইতেছেন, তখন উদয়াদিত্যের কাছে আসিয়া কহিলেন, “বাবা উদয়, আমাকেও তোর সঙ্গে লইয়া চল ।” উদয়াদিত্য কহিলেন, “সে কী কথা মা । তোমার সমর্যাদিত্য আছে, তোমার সমস্ত সংসার এখানে রহিল, তুমি যদি এখান হইতে যাও, তবে যশোহরে রাজলক্ষ্মী থাকিবে না।” মহিষী কঁাদিয়া কহিলেন, “বাছা, এই বয়সে তুই যদি সংসার ছাড়িয়া গেলি, আমি কোন প্ৰাণে সংসার লইয়া থাকিব ? রাজ্য সংসার পরিত্যাগ করিয়া তুই সন্ন্যাসী হইয়া থাকিবি, তোকে সেখানে কে দেখিবে ? তোর পিতা পাষাণ বলিয়া আমি তোকে ছাড়িতে পারিব না ।” মহিষী তাহার সকল সন্তানের মধ্যে উদয়াদিত্যকে অধিক ভালোবাসিতেন, উদয়াদিত্যের জন্য তিনি বুক ফাটিয়া কঁদিতে লাগিলেন। উদয়াদিত্য মায়ের হাত ধরিয়া অশ্রুনেত্ৰে কহিলেন, “মা, তুমি তো জানই রাজবাড়িতে থাকিলে আমার পদে পদে আশঙ্কার কারণ থাকিবে । তুমি নিশ্চিন্ত হও মা, আমি বিশ্বেশ্বরের চরণে গিয়া নিরাপদ হই ।” উদয়াদিত্য বিভার কাছে গিয়া কহিলেন, “বিভা, দিদি আমার, কাশী যাইবার আগে তোকে আমি সুখী করিয়া যাইব । আমি নিজে সঙ্গে করিয়া তোকে শ্বশুরবাড়ি লইয়া যাইব, এই আমার একমাত্ৰ সাধ আছে ।” “দাদামহাশয় ভালো আছেন।” বলিয়াই উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি সেখান হইতে চলিয়া গেলেন । পঞ্চত্রিংশ পরিচ্ছেদ উদয়াদিত্য ও বিভার যাত্রার উদযোগ হইতে লাগিল। বিভা মায়ের গলা ধরিয়া কঁাদিল । অন্তঃপুরে যে যেখানে ছিল, শ্বশুরালয়ে যাইবার আগে সকলেই বিভাকে নানাপ্রকার সদুপদেশ দিতে লাগিল । যদি তাহারা অযত্ন করে ।” উদয়াদিত্য চমকিয়া উঠিয়া কহিলেন, “কোন মা, তাহারা অযত্ন করিবে কেন ?” মহিষী কহিলেন, “কী জানি, তাহারা যদি বিভার উপর রাগ করিয়া থাকে ?” উদয়াদিত্য কহিলেন, “না মা, বিভা ছেলেমানুষ, বিভার উপর কি তাহারা কখনো রাগ করিতে পারে ?” तैत्ति ना |” উদয়াদিত্যের মনে একটা আশঙ্কা জাগিয়া উঠিল। বিভাকে যে শ্বশুরালয়ে অনাদর করিতে পারে, আগে তাহা তাহার মনেই হয় নাই। উদয়াদিত্য মনে করিয়াছিলেন, তাহার কর্মফল সমস্তই বুঝি শেষ হইয়া গিয়াছে, দেখিলেন এখনো শেষ হয় নাই । বিভাকে তিনি আশ্রয় করিয়াছেন, তাহার পরিণামস্বরূপে বিভার অদৃষ্ট কী আছে তা কে জানে । যাত্রার সময় উদয়াদিত্য ও বিভা মাকে আসিয়া প্ৰণাম করিলেন । পাছে যাত্রার বিষ্ম হয়, মহিষী৷ তখন কঁদিলেন না, তাহারা চলিয়া যাইতেই তিনি ভূমিতে লুটাইয়া পড়িয়া কঁদিতে লাগিলেন । উদয়াদিত্য ও বিভা পিতাকে প্ৰণাম করিয়া আসিলেন, বাড়ির অন্যান্য গুরুজনদের প্রণাম করিলেন । উদয়াদিত্য সমর্যাদিত্যকে কোলে তুলিয়া লইয়া তাহাকে চুম্বন করিলেন ও আপনার মনে কহিলেন, “বৎস, যে সিংহাসনে তুমি বসিবে, সে সিংহাসনের অভিশাপ তোমাকে স্পর্শ যেন না করে ।” রাজবাড়ির ভূত্যেরা উদয়াদিত্যকে বড়ো ভালোবাসিত, তাহারা একে একে আসিয়া তাহাকে প্ৰণাম
