পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२b~ রবীন্দ্র-রচনাবলী মেঘকৃষ্ণ চক্ষুপ্রান্ত হইতে উন্মুক্ত বজ্রশিখা স্বতীব্ৰ উগ্ৰজালা বিক্ষেপ করিতে লাগিল। এমন স্বামীর এমন অপমান! এত বিশ্বাসের এই পুরস্কার ! ইন্দ্রাণীর এই অত্যুগ্র নি:শব্দ রোষদাহ দেখিয়া অম্বিকার রাগ থামিয়া গেল। তিনি যেন দেবতার শাসন হইতে পাপীকে রক্ষা করিবার জন্য ইন্দ্রাণীর হাত ধরিয়া বলিলেন, "বিনোদ ছেলেমানুষ, দুর্বলস্বভাব, পাঁচজনের কথা শুনে তার মন বিগড়ে গেছে।” তখন ইন্দ্রাণী দুই হস্তে তাহার স্বামীর গলদেশ বেষ্টন করিয়া তাহাকে বক্ষের কাছে টানিয়া লইয়া আবেগের সহিত চাপিয়া ধরিল এবং হঠাৎ তাহার দুই চক্ষুর রোষদীপ্তি স্নান করিয়া দিয়া ঝরঝর করিয়া অশ্রুজল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। পৃথিবীর সমস্ত অন্যায় হইতে, সমস্ত অপমান হইতে, দুই বাহুপাশে টানিয়া লইয়া সে যেন তাহার হৃদয়-দেবতাকে আপন হৃদয়মন্দিরে তুলিয়া রাখিতে চায় । স্থির হইল অম্বিকাচরণ এখনই কাজ ছাড়িয়া দিবেন— আজ আর কেহ তাহাতে কিছুমাত্র প্রতিবাদ করিল না। কিন্তু এই তুচ্ছ প্রতিশোধে ইন্দ্রাণীর মন কিছুই সাস্তুনা মানিল না। যখন সন্দিগ্ধ প্রভু নিজেই অম্বিকাকে ছাড়াইতে উদ্যত তখন কাজ ছাড়িয়া দিয়া তাহার আর কী শাসন হইল। কাজে জবাব দিবার সংকল্প করিয়াই অম্বিকার রাগ থামিয়া গেল, কিন্তু সকল কাজকর্ম সকল আরামবিশ্রামের মধ্যে ইন্দ্রাণীর রাগ তাহার হৃৎপিণ্ডের মধ্যে জলিতে লাগিল । পরিশিষ্ট্র এমন সময়ে চাকর আসিয়া খবর দিল, বাবুদের বাড়ির খাজাঞ্চি আসিয়াছে। অম্বিক মনে করিলেন, বিনোদ স্বাভাবিক চক্ষুলজ্জাবশত খাজাঞ্চির মুখ দিয়া তাহাকে কাজ হইতে জবাব দিয়া পাঠাইয়াছেন। সেইজন্য নিজেই একখানি ইস্তফাপত্র লিখিয়া খাজাঞ্চির হস্তে গিয়া দিলেন । খাজাঞ্চি তৎসম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন না করিয়া কহিল, “সর্বনাশ হইয়াছে।” অম্বিক জিজ্ঞাসা করিলেন, "কী হইয়াছে।” তদুত্তরে শুনিলেন, যখন হইতে অম্বিকাচরণের সতর্কতাবশত খাজাঞ্চিখানা হইতে বিনোদের টাকা লওয়া বন্ধ হইয়াছে তখন হইতে বিনোদ নানা স্থান হইতে গোপনে বিস্তর টাকা ধার লইতে আরম্ভ করিয়াছিল। একটার পর একটা ব্যাবসা ফাদিয়া সে যতই প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছিল ততই তাহার রোধ চড়িয়া যাইতেছিল ; ততই নূতন নূতন অসম্ভব উপায়ে আপন ক্ষতি নিবারণের চেষ্টা করিয়া অবশেষে আকণ্ঠ ঋণে নিমগ্ন হইয়াছে। অম্বিকাচরণ যখন পীড়িত ছিলেন তখন বিনোদ সেই স্বযোগে