পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২৬১ আজ শনিবারের দিনে দুটোর সময় স্কুলের ছুটি ছিল, কিন্তু আজ স্কুলে যাইতে স্বশীলের কিছুতেই মন উঠিতেছিল না। তাহার অনেকগুলা কারণ ছিল । একে তো আজ স্কুলে ভূগোলের পরীক্ষা, তাহাতে আবার ও পাড়ার বোলেদের বাড়ি আজ সন্ধ্যার সময় বাজি পোড়ানো হইবে। সকাল হইতে সেখানে ধুমধাম চলিতেছে। সুশীলের ইচ্ছা, সেইখানেই আজ দিনট কাটাইয়া দেয়। অনেক ভাবিয়া, শেষকালে স্কুলে যাইবার সময় বিছানায় গিয়া শুইয়া পড়িল । তাহার বাপ বল গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "কী রে, বিছানায় পড়ে আছিল যে। আজ ইস্কুলে যাবি নে?” . . সুশীল বলিল, “আমার পেট কামড়াচ্ছে, আজ আমি ইস্কুলে যেতে পারব না।” স্থবল তাহার মিথ্যা কথা সমস্ত বুঝিতে পারিলেন। মনে মনে বলিলেন, ‘রোসে, একে আজ জব্দ করতে হবে।’ এই বলিয়া কহিলেন, “পেট কামড়াচ্ছে ? তবে অার তোর কোথাও গিয়ে কাজ নেই। বোলেদের ব্রাড়ি বাজি দেখতে হরিকে একলাই পাঠিয়ে দেব এখন । তোর জন্তে আজ লজঞ্চুস কিনে রেখেছিলুম, সেও আজ খেয়ে কাজ নেই। তুই এখানে চুপ করে পড়ে থাক, আমি খানিকটা পাচন তৈরি করে নিয়ে আসি।” এই বলিয়া তাহার ঘরে শিকল দিয়া স্ববলচন্দ্র খুব তিতে পাচন তৈয়ার করিয়া আনিতে গেলেন। স্বশীল মহা মুশকিলে পড়িয়া গেল । লজঞ্জুস সে যেমন ভালোবাসিত পাচন থাইতে হইলে তাহার তেমনি সর্বনাশ বোধ হইত। ও দিকে আবার বোসেদের বাড়ি যাইবার জন্য কাল রাত হইতে তাহার মন ছট্‌ফট্‌ করিতেছে, তাহাও বুঝি বন্ধ श्ल । । . . . * স্ববলবাবু যখন খুব বড়ো এক বাটি পাচন লইয়া ঘরে ঢুকিলেন সুশীল বিছানা হইতে ধড়ফড় করিয়া উঠিয়া বলিল, “আমার পেট কামড়ানো একেবারে সেরে গেছে, আমি আজ ইস্কুলে যাব।” i. 幡 বাবা বলিলেন, “না না, সে কাজ নেই, তুই পাচন খেয়ে এইখানে চুপচাপ করে শুয়ে থাক।” এই বলিয়া তাহাকে জোর করিয়া পাচন খাওয়াইয়া ঘরে তালা লাগাইয়া বাহির হইয়া গেলেন । * স্বশীল বিছানায় পড়িয়া কাদিতে কঁাদিতে সমস্ত দিন ধরিয়া কেবল মনে করিতে লাগিল যে, ‘আহা, যদি কালই আমার বাবার মতো বয়স হয়, আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি, আমাকে কেউ বন্ধ করে রাখতে পারে না।’ তাহার বাপ স্বলবাবু বাহিরে একলা বসিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন যে, “আমার বাপ মা আমাকে বড়ো বেশি আদর দিতেন বলেই তো আমার ভালোরকম পড়াশুনে