পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা Sశిఏ বুড়ে কর্তার মরণকালে দেশস্কন্ধ সবাই বলে উঠল, “তুমি গেলে আমাদের কী দশা হবে ।” শুনে তারও মনে দুঃখ হল । ভাবলে, “আমি গেলে এদের ঠাণ্ডা রাখবে কে ৷” তা ব’লে মরণ তো এড়াবার জো নেই। তবু দেবতা দয়া করে বললেন, "ভাবনা কী। লোকটা ভূত হয়েই এদের ঘাড়ে চেপে থাক-না। মামুষের মৃত্যু আছে, ভূতের তো মৃত্যু নেই।” দেশের লোক ভারি নিশ্চিস্ত হল । কেননা ভবিষ্কংকে মানলেই তার জন্তে যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোনো ভাবনাই নেই ; সকল ভাবনা ভূতের মাথায় চাপে । অথচ তার মাথা নেই, সুতরাং কারো জন্যে মাথাব্যথাও নেই । তৰু স্বভাবদোষে যারা নিজের ভাবনা নিজে ভাবতে যায় তারা খায় ভূতের কানমলা । সেই কানমলা না যায় ছাড়ানো, তার থেকে না যায় পালানো, তার বিরুদ্ধে না চলে নালিশ, তার সম্বন্ধে না আছে বিচার । দেশ মৃদ্ধ লোক ভূতগ্রস্ত হয়ে চোখ বুজে চলে । দেশের তত্ত্বজ্ঞানীরা বলেন, “এই চোখ বুজে চলাই হচ্ছে জগতের সবচেয়ে আদিম চলা । একেই বলে অদৃষ্টের চালে চলা । স্বষ্টির প্রথম চক্ষুহীন কাটাপুরা এই চলা চলত ; ঘাসের মধ্যে, গাছের মধ্যে, আজও এই চলার আভাস প্রচলিত ।” শুনে ভূতগ্রস্ত দেশ আপন আদিম আভিজাত্য অনুভব করে। তাতে অত্যন্ত আনন্দ পায় । ভূতের নায়েব ভূতুড়ে জেলখানার দারোগা । সেই জেলখানার দেয়াল চোখে দেখা যায় না। এইজন্তে ভেবে পাওয়া যায় না, সেটাকে ফুটো করে কী উপায়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব । এই জেলখানায় যে ঘানি নিরস্তর ঘোরাতে হয় তার থেকে এক ছটাক তেল বেরোয় না বা হাটে বিকোতে পারে, বেরোবার মধ্যে বেরিয়ে যায় মাহুষের তেজ । সেই তেজ বেরিয়ে গেলে মাস্থ্য ঠাগু হয়ে যায়। তাতে করে ভূতের রাজত্বে আর কিছুই না থাক— জয় হোক, বন্ধ হোক, স্বাস্থ্য হোক— শান্তি থাকে।