পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSß রবীন্দ্র-রচনাবলী মহারাজ বলিলেন, “আশ্চর্য । শব্দ কম নয় ।” ভাগিনা বলিল, “শুধু শব্দ নয়, পিছনে অর্থও কম নাই।” রাজা খুশি হইয়া দেউড়ি পার হইয়া ষেই হাতিতে উঠিবেন এমন সময়, নিন্দুক ছিল ঝোপের মধ্যে গা ঢাকা দিয়া, সে বলিয়া উঠিল, “মহারাজ, পাখিটাকে দেখিয়াছেন কি ৷” রাজার চমক লাগিল ; বলিলেন, “ঐ যা ! মনে তো ছিল না। পাখিটাকে দেখা হয় নাই ।” ফিরিয়া আসিয়া পণ্ডিতকে বলিলেন, “পাখিকে তোমরা কেমন শেখাও তার কায়দাটা দেখা চাই ।” দেখা হইল। দেখিয়া বড়ো খুশি । কায়দাটা পাখিটার চেয়ে এত বেশি বড়ো যে, পাখিটাকে দেখাই যায় না ; মনে হয়, তাকে না দেখিলেও চলে। রাজা বুঝিলেন, আয়োজনের ক্রটি নাই। খাচায় দানা নাই, পানি নাই ; কেবল রাশি রাশি পুথি হইতে রাশি রাশি পাতা ছিড়িয়া কলমের ডগা দিয়া পাখির মুখের মধ্যে ঠাসা হইতেছে। গান তো বন্ধই, চীংকার করিবার ফাকটুকু পর্যস্ত বোজা । দেখিলে শরীরে রোমাঞ্চ হয়। এবারে রাজা হাতিতে চড়িবার সময় কানমলা-সর্দারকে বলিয় দিলেন, নিন্দুকের যেন আচ্ছা করিয়া কান মলিয়া দেওয়া হয় । و!\ পাখিটা দিনে দিনে ভদ্র-দস্তুর-মত আধমরা হইয়া আসিল । অভিভাবকেরা বুঝিল, বেশ আশাজনক। তবু স্বভাবদোষে সকালবেলার আলোর দিকে পাখি চায় আর অন্তায় রকমে পাখা ঝটুপটু করে। এমন-কি, এক-একদিন দেখা যায় সে তার রোগ ঠোট দিয়া খাচার শলা কাটিবার চেষ্টায় আছে । কোতোয়াল বলিল, “এ কী বেয়াদবি ।” তখন শিক্ষামহালে হাপর হাতুড়ি আগুন লইয়। কামার আসিয়া হাজির। কী দমদম পিটানি। লোহার শিকল তৈরি হইল, পাখির ডানাও গেল কাট । রাজার সন্ধীয়া মুখ হাড়ি করিয়া মাথা নাড়িয়া বলিল, “এ রাজ্যে পাখিদের কেবল ঘে আঙ্কেল নাই তা নয়, কৃতজ্ঞতাও নাই ।” তখন পণ্ডিতেরা এক হাতে কলম, এক হাতে সড়কি লইয়া এমনি কাও করিল যাকে বলে শিক্ষণ ।