পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিক ఆగీ বট বললে, “তুমি এত সমারোহ কোথায় দেখলে ।” আমি বললেম, "তোমার লড়াইকে দেখি শাস্তির রূপে, তোমার কর্মকে দেখি বিশ্রামের বেশে, তোমার জয়কে দেখি নম্রতার মূর্তিতে। সেই জন্তেই তো তোমার ছায়ায় সাধক এসে বলেছে ঐ সহজ যুদ্ধজয়ের মন্ত্র আর ঐ সহজ অধিকারের সন্ধিটি শেখবার জন্তে । প্রাণ যে কেমন ক’রে কাজ করে, অরণ্যে অরণ্যে তারই পাঠশালা খুলেছ। তাই যারা ক্লাস্ত তারা তোমার ছায়ায় আসে, যারা আর্ত তারা তোমার বাণী খোজে । আমার স্তব শুনে বটের ভিতরকার প্রাণপুরুষ বুঝি খুশি হল ; সে বলে উঠল, “আমি বেরিয়েছি মরুদৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে ; কিন্তু আমার এক ছোটো ভাই আছে, সে যে কোন লড়াইয়ে কোথায় চলে গেল আমি তার আর নাগাল পাই নে। কিছু ক্ষণ আগে তারই কথা কি তুমি বলছিলে ।”

  • ই্যা, তাকেই আমরা নাম দিয়েছি— মন ।”
  • লে আমার চেয়ে চঞ্চল । কিছুতে তার সন্তোষ নেই। সেই অশাস্তটার খবর আমাকে দিতে পার ?”

আমি বললেম, “কিছু কিছু পারি বই কি ! তুমি লড়ছ বঁচিবার জন্তে, সে লড়ছে পাবার জন্তে, আরও দূরে আর-একটা লড়াই চলছে ছাড়বার জন্তে । তোমার লড়াই আলাড়ের সঙ্গে, তার লড়াই অভাবের সঙ্গে, আরও একটা লড়াই আছে সঞ্চয়ের সঙ্গে । লড়াই জটিল হয়ে উঠল, বৃহের মধ্যে যে প্রবেশ করছে বৃহ থেকে বেরোবার পথ সে খুঁজে পাচ্ছে না। হার জিত অনিশ্চিত বলে ধাদা লাগল। এই দ্বিধার মধ্যে তোমার ঐ সবুজ পতাকা যোদ্ধাদের আশ্বাস দিচ্ছে । বলছে, ‘জয়, প্রাণের জয় । গানের তান বেড়ে বেড়ে চলেছে, কোন সপ্তক থেকে কোন সপ্তকে চড়ল তার ঠিকানা নেই। এই স্বরসংকটের মধ্যে তোমার তদূরাটি সরল তারে বলছে, ‘ভয় নেই, ভয় নেই।’ বলছে, ‘এই তো মূল স্বর আমি বেঁধে রেখেছি, এই আদি প্রাণের স্বর। সকল উন্মত্ত তানই এই স্বরে স্বন্দরের ধুয়োয় এসে মিলবে আনন্দের গানে। সকল পাওয়া, সকল দেওয়া ফুলের মতো ফুটবে, ফলের মতো ফলবে ।’ ”