পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লিপিকা ১৬৯ কিন্তু, ভরসা হয় না । কারণ, আমার প্রধান মন্ত্রী হল মন । সে দিনরাত তার দাড়িপাল্লা আর মাপকাঠি নিয়ে ওজন-দরে আর গজের মাপে সমস্ত জিনিল যাচাই করছে । সে কেবলই বলছে, “আরও না হলে চলবে না।”

  • কেন চলবে না।”

"সে যে মস্ত বড়ো ।”

  • কে মস্ত বড়ো ।”

বাস, চুপ। আর কথা নেই। যখন তাকে চেপে ধরি "অমন করে এড়িয়ে গেলে চলবে না, একটা জবাব দিতেই হবে" তখন সে রেগে উঠে বলে, “জবাব দিতেই হবে, এমন কী কথা । যার উদ্দেশ মেলে না, যার খবর পাই নে, যার মানে বোঝবার জো নেই, তুমি সেই কথা নিয়েই কেবল আমার কাজ কামাই করে দাও । আর, আমার এই দিকটাতে তাকাও দেখি । কত মামলা, কত লড়াই ; লাঠিলড়কি-পাইক-বরকন্দাজে পাড়া জুড়ে গেল ; মিস্কিতে মজুরে ইটকাঠ-চুন-স্বরকিতে কোথাও পা ফেলবার জো কী । সমস্তই স্পষ্ট ; এর মধ্যে আন্দাজ নেই, ইশারা নেই। তবে এ-সমস্ত পেরিয়েও আবার প্রশ্ন কেন ।” শুনে তখন ভাবি, মনটাই সেয়ান, আমিই অবুঝ । আবার ঝুড়িতে করে ইট বয়ে আনি, চুনের সঙ্গে স্বরকি মেশাতে থাকি । २ এমনি করেই দিন যায়। আমার ভূমি দিগন্ত পেরিয়ে গেল, ইমারতের পাচ তলা সরি হয়ে ছ'তলার ছাদ পিটোনো চলছে। এমন সময়ে একদিন বাদলের মেঘ কেটে গেল ; কালো মেঘ হল সাদা ; কৈলাসের শিখর থেকে ভৈরোর তান নিয়ে ছুটির হাওয়া বইল, মানস-সরোবরের পদ্মগন্ধে দিনরাত্রির দণ্ডপ্রহরগুলোকে মৌমাছির মতো উতলা করে দিলে । উপরের দিকে তাকিয়ে দেখি, সমস্ত আকাশ হেসে উঠেছে আমার ছয়তলা ঐ বাড়িটার উদ্ধত ভারাগুলোর দিকে চেয়ে । আমি তো ব্যাকুল হয়ে পড়লেম ; ষাকে দেখি তাকেই জিজ্ঞাসা করি, "ওগো, কোন হাওয়াখানা থেকে আজ নহবত বাজছে বলো তো " তারা বলে, "ছাড়ো, আমার কাজ আছে।” একটা খ্যাপা পথের ধারে গাছের গুড়িতে ছেলান দিয়ে, মাথায় কুন্দকুলের মালা জড়িয়ে চুপ করে বলে ছিল। সে বললে, "আগমনীর হয় এসে পৌছল।" আমি যে কী বুঝলেম জানি নে ; বলে উঠলেম, তবে জার দেরি নেই।”