পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९०९ রবীন্দ্র-রচনাবলী চিটেগুড়, তামাক তৈরী করবে। বাবার পায়ে ঠেকে তার হাড়ি গেল টলে— চিটেগুড়ে তার মুখ চোখ গেল বুজে। বাবার দয়ার শরীর ; বললে, ভেকু, তোর মনের কামনা কী খুলে বল। ভেকুটা বোকা ; বললে, বাবা একখানা ট্যানা দাও, মুখটা মুছে ফেলি। বেমনি বলা অমনি গাছ থেকে থলে পড়ল একখানা গামছা । মুখ চোখ মুছে উপরে যখন তাকালো তখন আর কারও দেখা নেই। যা চাইবে কেবল একবার। বাস, তার পরে কেঁদে আকাশ ফাটালেও সাড়া মিলবে না। পষ্ণু। হায় রে হায়, শাল নয়, দোশালা নয়, শুধু একখানা গামছা ! ভেকুর আর বুদ্ধি কত হবে। উধো। তা হোক, নেপু। ঐ গামছা নিয়েই তার দিব্যি চলে যাচ্ছে— দেখিল নি ? রথতলার কাছে অত বড়ো আটচালা বানিয়েছে । গামছা হোক, বাবার গামছা তো । পষ্ণু কী করে হল । ভেলকি নাকি । উধো । হোদলপাড়ার মেলায় ভেকু সেদিন বাবার গামছা পেতে বসল। হাজারে হাজারে লোক এসে জুটল। বাবার নামে টাকাটা সিকেটা আলুটা মুলোট চার দিক থেকে গামছার উপর পড়তে লাগল । মেয়ের কেউ বা এসে বলে, ও ভেকুদাদা, আমার ছেলেটার মাথায় বাবার গামছা একটু ঠেকিয়ে দে, আজ তিনমাস ধ’রে জরে ভুগছে । ওর নিয়ম হচ্ছে নৈবিদ্যি চাই পাঁচ সিকে, পাচটা স্বপুরি, পাচ কুনকে চাল, পাচ ছটাক ঘি । পঞ্চু । নৈবিদ্যি তো দিচ্ছে, ফল পাচ্ছে কিছু ? উধো। পাচ্ছে বৈ কি । গাজন পাল গামছা ভরে পনেরো দিন ধরে ধান ঢেলেছে ; তার পরে ঐ গামছার কোণে দড়ি লাগিয়ে একটা পাঠা ও দিলে বেঁধে, ঐ পাঠার ডাকে চার দিক থেকে লোক এসে জমল । কী বলব, ভাই, মাস এগারো পরেই গাজনের চাকরি জুটে গেল। আমাদের রাজবাড়ির কোতোয়ালের সিদ্ধি ঘোটে, তার দাড়ি চুম্রিয়ে দেয়। পঞ্চু । সত্যি বলছিল ? উধো। সত্যি না তো কী । গাজন যে আমার মামাতো ভাইয়ের ভায়রাछांझे झञ्च । পঞ্চ । আচ্ছা ভাই উধো, গামছাট তুই দেখেছিল ? উধো। দেখেছি বৈ কি। হুটুগঞ্জের তাতে দেড়গজ ওলারের যে গামছা বুহ্বনি হয়, চাপার বরন জমি, লাল পাড়, একেবারে বেমালুম তাই।