পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ડેનિઝ রবীন্দ্র-রচনাবলী আপন ক্ষোভ। সেই রচনার প্রভাব ফিরে এলে তার নিজের সংসাররচনায় চরিত্ররচনায় কাজ করছে। মাচুষের বড়ো ইচ্ছাকে ষে সাহিত্য আকার দিয়েছে, এবং আকার দেওয়ার দ্বারা মাহুষের মনকে ভিতরে ভিতরে বড়ো ক’রে তুলছে, তাকে মানুষ যুগে যুগে সম্মান দিয়ে এসেছে। এইসঙ্গে একটা কথা মনে রাখতে হবে, সাহিত্যে মানুষের চারিত্রিক আদশের ভালো মন্দ দেখা দেয় ঐতিহাসিক নানা অবস্থাভেদে । কখনো কখনো নানা কারণে ক্লান্ত হয় তার শুভবুদ্ধি, যে বিশ্বাসের প্রেরণায় তাকে আত্মজয়ের শক্তি দেয় তার প্রতি নির্ভর শিথিল হয়, কলুষিত প্রবৃত্তির স্পর্ধায় তার রুচি বিকৃত হতে থাকে, শৃঙ্খলিত পশুর শৃঙ্খল যায় খুলে, রোগজর্জর স্বভাবের বিষাক্ত প্রভাব হয়ে ওঠে সাংঘাতিক, ব্যাধির সংক্রামকতা বাতালে বাতাসে ছড়াতে থাকে দূরে দূরে। অথচ মৃত্যুর ছোয়াচ লেগে তার মধ্যে কখনো কখনো দেখা দেয় শিল্পকলার আশ্চর্য নৈপুণ্য । শুক্তির মধ্যে মুক্ত দেখা দেয় তার ব্যাধিরূপে। শীতের দেশে শরৎকালের বনভূমিতে যখন মৃত্যুর হাওয়া লাগে তখন পাতায় পাতায় রঙিন তার বিকাশ বিচিত্র হয়ে ওঠে, সে তাদের বিনাশের উপক্রমণিকা । সেইরকম কোনো জাতির চরিত্রকে যখন আত্মঘাতী রিপুর দুর্বলতায় জড়িয়ে ধরে তখন তার সাহিত্যে, তার শিল্পে, কখনো কখনো মোহনীয়তা দেখা দিতে পারে। তারই প্রতি বিশেষ লক্ষ নির্দেশ ক’রে যে রসবিলাসীরা অহংকার করে তারা মানুষের শত্রু । কেননা সাহিত্যকে শিল্পকলাকে সমগ্র মন্থস্বত্ব থেকে স্বতন্ত্র করতে থাকলে ক্রমে সে আপন শৈল্পিক উৎকর্ষের আদর্শকেও বিকৃত করে তোলে। মানুষ যে কেবল ভোগরসের সমজদার হয়ে আত্মশ্লাঘা করে বেড়াবে তা নয় ; তাকে পরিপূর্ণ করে বাচতে হবে, অপ্ৰমত্ত পৌরুষে বীর্যবান হয়ে সকলপ্রকার অমঙ্গলের সঙ্গে লড়াই করবার জন্তে প্রস্তুত হতে হবে । স্বজাতির সমাধির উপরে ফুলবাগান নাহয় নাই তৈরি হল । وا সমুদ্রের মধ্যে হাজার হাজার প্রবাল আপন দেহের, আবরণ মোচন করতে করতে কখন এক সময়ে দ্বীপ বানিয়ে তোলে। তেমনি বহুসংখ্যক মন আপনার অংশ দিয়ে দিয়ে গড়ে তুলেছে আপনার ভাষাদ্বীপ । মাহুষ বানিয়েছে আপনার গায়ের কাপড় । বয়স বাড়তে বাড়তে তার দেহের মাপের বদল হয়। বারবার পুরোনো কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন কাপড় না বানালে তার চলে না। জাতির মন কখনো বাড়ে, আবার রগী উপবাসীর সেরকম দশা হয় তেমনি