পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8s. রবীন্দ্র-রচনাবলী যছ। য ফলার পূর্বেও অকারের এই দশা, যেমন : কল্য মন্ত পণ্য বস্ত। যদি বলা স্বায় এইটেই স্বাভাবিক তা হলে আবার বলতে হয়, এ স্বভাবটা সর্বজনীন নয় । পূর্ববঙ্গের রসনায় অকারের এ বিপদ ঘটে না। তা হলেই দেখা যাচ্ছে, অকারকে বাংলা বর্ণমালায় স্বীকার করে নিয়ে পদে পদে তাকে অশ্রদ্ধা করা হয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ অংশে । শব্দের শেষে হসন্ত তাকে খেদিয়েছে, শব্দের আরম্ভে সে কেবলই তাড়া খেতে থাকে। শব্দের মাঝখানেও অকারের মুখোষ পরে ওকারের একাধিপত্য, যথা : খড়ম বালক আদর বঁাদর কিরণ টোপর চাকর বাসন বাদল বছর শিকড় আসল মঙ্গল সহজ । বিপদে ওর একমাত্র রক্ষা সংস্কৃত ভাষার করক্ষেপে, যেমন : অ-মল বি-জন নী-রস কু-রঙ্গ স-বল দুর-বল অন-উপম প্রতি-পদ । এই আশ্রয়ের জোরও সর্বত্র খাটে নি, যথা : বিপদ বিষম সকল । মধ্যবর্ণের অকার রক্ষা পায় য় বর্ণের পূর্বে, যথা : সময় মলয় আশয় বিষয় । মধ্যবর্ণের আকার ওকার হয়, সে-ধে কেবল হসন্ত শব্দে তা নয়। আকারাস্ত এবং যুক্তবর্ণের পূর্বেও এই নিয়ম, যথা : বসন্ত আলন্ত লবঙ্গ সহস্ৰ বিলম্ব স্বতন্ত্র রচনা রটনা যোজনা কল্পনা বঞ্চনা। ইকার আর উকার পদে পদে অকারকে অপদস্থ করে থাকে তার আরও প্রমাণ আছে । সংস্কৃত ভাষায় ঈয় প্রত্যয়ের যোগে 'জল' হয় "জলীয়’ । চলতি বাংলায় ওখানে আসে উআ প্রত্যয় : জল+উমা-জলুম । এইটে হল প্রথম রূপ । কিন্তু উ স্বরবর্ণ শব্দটাকে স্থির থাকতে দেয় না। তার বা দিকে আছে বাংলা অ, ভান দিকে আছে আ, এই দুটোর সঙ্গে মিশে দুই দিকে দুই ওকার লাগিয়ে দিল, হয়ে দাড়ালো 'জোলো’ । অকারে বা অযুক্ত বর্ণে যে-সব শব্দের শেষ সেই-সব শব্দের প্রাস্তে অ বালা পায় না, তার দৃষ্টান্ত পূর্বে দিয়েছি। ব্যতিক্রম আছে ত প্রত্যয়-ওয়ালা শৰে, যেমন : গত হত ক্ষত। আর কতকগুলি সর্বনাম ও অব্যয় শব্দে, যেমন : যত তত কত যেন কেন হেন। আর এক শো’ অর্থের ‘শত’ শব্দে। কিন্তু এ কথাটাও ভূল হল । বানানের ছলনা দেখে মনে হয় অন্তত ঐ কটা জায়গায় অ বুঝি টিকে আছে । কিন্তু সে ছাপার অক্ষরে আপনার মান বাচিয়ে মুখের উচ্চারণে ওকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, হয়েছে : নতো শতো গতো ক্যানো । আকারের অত্যন্ত অনাদর ঘটেছে বাংলার বিশেষণ শব্দে । বাংলাভাষায় দুই