পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Se রবীন্দ্র-রচনাবলী বাংলা ভাষায় ক্রিয়াপদে বহুবচনের চিহ্ন থাকলেও তার অর্থ হয়েছে লোপ | সংস্কৃতে বহুবচনে পতন্তি’ শব্দ আছে প্রথমপুরুষের পতন বোঝাতে। বাংলায় সেই অস্তি’র ন রয়েছে ‘পড়েন’ শৰে, কিন্তু এ ভাষায় "তিনিও পড়েন “র্তারা’ও পড়েন । এই ন’কারধারী ক্রিয়াপদ কেবল “আপনি” আর ‘আপনারা’, ‘তিনি’ ও ‘র্তারা’, এঁদের সম্মান রক্ষার কাজেই নিযুক্ত। প্রাচীন রামায়ণে এইরূপ স্থানে প্রায় সর্বত্রই দেখা যায় পড়েন্ত’ ‘দেখিলেস্ত’ প্রভৃতি স্ত-বিশিষ্ট ক্রিয়াপদ একবচনে এবং বহুবচনে, প্রথমপুরুষে । সদ্যঅতীত কালের প্রথমপুরুষ ক্রিয়াপদে বিকল্পে ইল এবং ইলে প্রয়োগ হয়, যেমন : সে ফল পাড়ল, সে ফল পাড়লে । এই একার প্রয়োগ প্রাচীন পদাবলীতে দৈবাৎ দেখেছি, যথা : বিধিলে বাণ । কিন্তু অনেক দেখা গেছে ময়নামতীর গানে, যেমন : বিকল দেখি হাড়িপা রহিলে। এ সম্বন্ধে একটা সাধারণ নিয়ম এই যে, অচেতনবাচক শব্দের ক্রিয়াপদে ‘এ’ লাগে না । অসমাপিকাতে লাগে, যেমন : পা ফুললে ডাক্তার ডেকো । ‘তার পা ফুলল’ হয়, ‘পা ফুললে’ হয় না। নির্বস্তক শব্দ সম্বন্ধেও সেই কথা : র্তার কলকাতায় যাওয়া ঘটল না । ‘ঘটলে না' হতে পারে না। এ ছাড়া নিম্নলিখিত কয়েকটি ক্রিয়াপদে ‘এ’ খাটে না : এল গেল হল, প'ল ( পড়ল ), ম’ল ( মরল ) । দুই অক্ষরের ক্রিয়াপদমাত্রে এই ব্যতিক্রম হয় এমন যেন মনে করা না হয়। তার প্রমাণ : খেল নিল দিল শুল ধুল । ইতে-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে ‘এ’ লাগে না, যেমন : করতে থাকল, হাসতে লাগল। কিন্তু ইয়া-প্রত্যয়যুক্ত জোড়া ক্রিয়াপদে লাগে, যেমন : লে হেসে ফেললে। এ ছাড়া আরও দুই-এক জায়গায় কানে সন্দেহ ঠেকে, যেমন ‘ভোর বেলায় সে মরলে বলি নে, 'মরল'ই ঠিক শোনায়। কিন্তু “তিনি মরলেন নিত্যব্যবহৃত । "কলকাতায় সে চললে’ বলি নে, কিন্তু "তিনি চললেন’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। প্রাচীন রামায়ণে দেখা গেছে প্রথমপুরুষের সম্ভঅতীত ক্রিয়াপদে প্রায় সর্বত্রই ক-প্রত্যয়-সমেত একার, যেমন : দিলেক লইলেক । আবার একারের সম্পর্ক নেই এমন ধৃষ্টান্তও অনেক আছে, যেমন : চলিল সম্বর, পাঠাইল ত্বরিত। আধুনিক বাংলায় এইরূপ ক্রিয়াপদে কোথাও 'এ লাগে কোথাও লাগে না, কিন্তু অন্তস্থিত ক-প্রত্যয়টা খসে গেছে । ** প্রথমপুরুষ ইল-প্রত্যয়যুক্ত ক্রিয়াপদে এই-বে একার প্রয়োগ, এরই সঙ্গে সম্ভবত করলেম চললেম' শব্দের একার-উচ্চারণের যোগ আছে। করলেন ( করিল তিনি ), জার, করলেম (করিল আমি ) : এক নিয়মে পাশাপাশি বলতে পারে। আরও একটা কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে, সে হচ্ছে স্বরবিকারেব নিয়ম। ই’র পর জা থাকলে