পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় 886 ۔پ۔. শব্দভঙ্গীর ভাবখানা এই যে, বা হচ্ছে বা করা হচ্ছে সেটা ভালো নয়, সেটা ক্ষতিকর, বা অপ্রিয়, কিন্তু তবু ওটাকে গ্রাহ করার দরকার নেই। "মরুকগে’ শৰে এই ভাষাভী খুবই স্পষ্ট হয়েছে। এই ছোট বাংলা শব্দটির ইংরেজি প্রতিবাক্য : Hang it, let it go to the dogs ইংরেজিতে সাধারণ ব্যবহারের ক্রিয়াপদ অম্বুজায় প্রায়ই এক মাত্রার হয়, যেমন, run stop cut beat shoot march hold throw I cotta Ho foot'in ব্যবহার হয় সেখানে এক মাত্রার দুটি শব্দ জোড়া লাগে, যেমন : come in, go out, cut down, stand up, run on off or assos, of of we sco আজ্ঞার জোর পৌছয়। স্কাউটের বা ফৌজের কুচকাওয়াজে ইংরেজিতে যে-সব আদেশবাক্য আছে এই কারণে লেগুলো জোরালো হয়। যে-সকল শব্দ ব্যঞ্জনবর্ণে শেষ হয় তারা ধাক্কা দেয় জোরে. stand up শব্দ উভয়ে মিলে দুই মাত্রার বটে কিন্তু তাতে ছুই ব্যঞ্জনবর্ণের দুটো ঠোকর আছে । ‘দাড়াও’ শব্দটাও দুই মাত্রার, কিন্তু তার আগাগোড়া স্বরবর্ণ, তাদের স্পর্শ মোলায়েম । কথাটা ধা করে ছোটে না । ‘তুই’ ‘তোর' বর্গের অস্থঙ্গায় এই দুর্বলতা নেই! বোস ওঠ, ছোট থাম্ কাট্‌ মার ধৰ্ব খেল : এগুলি দৌড়দার শব্দ। আদিকালে ভাষায় ‘তু ‘তুই’ ছিল একমাত্র মধ্যমপুরুষের সর্বনাম শব্দ। সেটা যদি চলে আসত তা হলে ক্রিয়াপদকে স্বরবর্ণ এমন নরম করে রাখত না, হলন্ত ব্যঞ্জনবর্ণে তাকে তীক্ষতা দিত। ‘করো’ হ’ত কির’। ‘কোরো হ’ত ‘করিস । 'দাড়া’ শব্দ যদিও স্বরবর্ণ বহন করে তৰু দাড়াও শব্দের চেয়ে তার মধ্যে প্রস্তুশক্তি বেশি। ‘ঘুমো’ আর ঘুমোও তুলনা করলে অস্থঙ্গার দিক থেকে প্রথমোক্তটির প্রৰলতা মানতে হয় । চলতি বাংলা ভক্ষীপ্রধান ভাষা, তার একটা লক্ষণ ক্রিয়াপদের অস্থজ্ঞায় অসংগত ভাবে 'না' শব্দের ব্যবহার । এর কাজ হচ্ছে আদেশ বা অম্বুরোধকে অন্থনয়ে নরম क८द्र यांनी । ‘হোক না’ ‘করোই না’ ক্রিয়াপদে "না" শবে নির্বন্ধ প্রকাশ পায়, কোনো-এক পক্ষের অনিচ্ছাকে যেন ঠেলে দেওয়া। 'না' শব্দের দ্বারা 'ই' প্রকাশ করা আর প্রথমপুরুষ-বাচক 'আপনি'কে মধ্যমপুরুষের অর্থে ব্যবহার একই মনস্তত্বমূলক । যিনি উপস্থিত আছেন যেন তিনি উপস্থিত নেই, তার সঙ্গে মোকাবিলায় কথা বলার স্পর্ধ বক্তার পক্ষে সম্ভব নয়, এই ভাগের দ্বারাই তার উপস্থিতির মূল্য বায় বেড়ে। তেমনি অম্বরোধ জানানোর পরক্ষণেই 'না' বলে তার প্রতিবাদ ক’রে অক্ষরোধের মধ্যে সম্মানের কাকুতি এনে