পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢¢९ . রবীন্দ্র-রচনাবলী ইহার হাতে স্বায়ুঘটিত পীড়া হওয়াতে ইহার বাজনা বন্ধ হইয়া গিয়াছে। ইনি ভারতবর্ষে থাকিয়া কিছুকাল বিশেষভাবে দক্ষিণভারতের সংগীত আলোচনা করিয়াছেন ; ইনিও সে সম্বন্ধে বই লিখিতে প্রবৃত্ত আছেন। W. একদিন ডাক্তার কুমারস্বামীর এক নিমন্ত্রণপত্রে পড়িলাম, তিনি আমাকে রতন দেবীর গান শুনাইবেন । রতন দেবী কে বুঝিতে পারিলাম না ; ভাবিলাম কোনো ভারতবর্ষীয় মহিলা হইবেন। দেখিলাম তিনি ইংরেজ মেয়ে, যেখানে নিমজ্জিত হইয়াছি সেইখানকার তিনি গৃহস্বামিনী । মেজের উপর বসিয়া কোলে তারা লইয়া তিনি গান ধরিলেন। আমি আশ্চর্ষ হইয়া গেলাম। এ তো 'ছিলিমিলি পনিয়া' নহে ; রীতিমত আলাপ করিয়া তিনি কানাড়া মালকোষ বেহাগ গান করিলেন। তাছাতে সমস্ত দুরূহ মিড় এবং তান লাগাইলেন, হাতের ইঙ্গিতে তাল দিতে লাগিলেন ; বিলাতি, সম্মার্জনী বুলাইয়া আমাদের সংগীত হইতে তাহার ভারতবর্ষীয়ৰ বারো-আনা পরিমাণ ঘষিয়া তুলিয়া ফেলিলেন না। আমাদের ওস্তাদের সঙ্গে প্রভেদ এই যে ইহার কণ্ঠস্বরে কোথাও যেন কোনো বাধা নাই ; শরীরের মুদ্রায় বা গলার স্বরে কোনো কষ্টকর প্রয়াসের লক্ষণ দেখা গেল না। গানের মূর্তি একেবারে অক্ষুণ্ণ অক্লাস্ত হইয়া দেখা দিতে লাগিল । এ দেশে এই র্যাহারা ভারতবর্ষীয় সংগীতের আলোচনায় প্রবৃত্ত আছেন, ইহার যে কেবলমাত্র কৌতুহল চরিতার্থ করিতেছেন তাহা নহে ; ইহারা ইহার মধ্যে একটা অপূর্ব সৌন্দৰ দেখিতে পাইয়াছেন— সেই রসটিকে গ্রহণ করিবার জন্ত, এমন-কি, সম্ভবমত আপনাদের সংগীতের অঙ্গীভূত করিয়া লইবার জন্ত ইহারা উংস্থক হইয়াছেন । ইহাদের সংখ্যা এখনো নিতান্তই অল্প সন্দেহ নাই, কিন্তু আগুন একটা কোণেও যদি লাগে তবে আপনার তেজে চারি দিকে ছড়াইয়া পড়ে । এখানকার লণ্ডন একাডেমি অফ মুজিকের অধ্যক্ষ ডাক্তার ইয়র্কট্রটারের সঙ্গে আমার দেখা হইয়াছে। তিনি ভারতবর্ষীয় সংগীতের কিছু কিছু পরিচয় পাইয়াছেন । যাহাতে লগুনে এই সংগীত আলোচনার একটা উপায় ঘটে লেজস্ত আমার নিকট তিনি বারস্বরে ঔৎস্থক্য প্রকাশ করিয়াছেন। যদি কোনো ভারতবৰীয় ধনী রাজা কোনো বড়ো ওস্তাদ বীণাবাদককে এখানে কিছুকাল রাখিতে পারেন তাহা হইলে, তাহার মতে, বিস্তর উপকার হইতে পারে। । উপকার আমাদেরই সবচেয়ে বেশি। কেননা, জামাদের শিল্পসংগীতের প্রতি শ্রদ্ধা আমরা হারাইয়াছি। আমাদের জীবনের সঙ্গে তাহার যোগ নিতান্তই ক্ষীণ হইয়া জাসিয়াছে। নদীতে যখন ভাট পড়ে তখন কেবল পাক বাছির হইয়া পড়িতে