পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*icक्षुब्र সঞ্চয় Qb-> অন্তকার প্রভাতের এই অতলম্পর্শ শুভ্রতার মধ্যে আমি জামার আস্তরাত্মাকে অবগাহন করাইতেছি। বড়ো শীত, বড়ো কঠিন এই স্বান। নিজেকে যে একেবারে শিশুর মতো নগ্ন করিয়া দিতে হইবে, এবং ডুবিতে ডুবিতে একেবারে কিছুই যে বাকি থাকিবে না— উর্ধ্বে শুভ্ৰ, অধোতে শুভ্ৰ, সন্মুখে শুভ্ৰ, পশ্চাতে শুভ্র, আরম্ভে শুভ্র, অস্তে শুভ্ৰ— শিব এব কেবলম্— সমস্ত দেহমনকে শুভ্রের মধ্যে নিঃশেষে নিবিষ্ট করিয়া দিয়া নমস্কার— নমঃ শিবায় চ শিবতরায় চ | বাধক্যের কাস্তি যে কী মহৎ, কী গভীর স্বন্দর, আমি তাহাই দেখিতেছি । যত-কিছু বৈচিত্র্য সমস্ত ধীরে ধীরে নিঃশব্দে ঢাকা পড়িয়া গেল, অনবচ্ছিন্ন একের শুভ্রতা সমস্তকেই আপনার আড়ালে টানিয়া লইল । সমস্ত গান ঢাকা পড়িল, প্রাণ ঢাকা পড়িল, বর্ণচ্ছটার লীলা সাদায় মিলাইয়া গেল। কিন্তু, এ তো মরণের ছায়া নয়। আমরা যাহাকে মরণ বলিয়া জানি লে যে কালো ; শূন্তত তো আলোকের মতো সাদা নয়, লে যে অমাবস্তার মতো অন্ধকারময় । স্বর্ষের শুভ্র রশ্মি তাহার লাল নীল সমস্ত ছটাকে একেবারে আবৃত করিয়া ফেলিয়াছে ; কিন্তু, তাহাকে তো বিনাশ করে নাই, তাহাকে পরিপূর্ণরূপে আত্মসাং করিয়াছে। আজ নিস্তব্ধতার অস্তনিগুঢ় সংগীত আমার চিত্তকে অস্তরে রসপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছে। আজ গাছপালা তাহার সমস্ত আভরণ খসাইয়া ফেলিয়াছে, একটি পাতাও বাকি রাখে নাই ; সে তাহার প্রাণের সমস্ত প্রাচুর্যকে অস্তরের অদৃপ্ত গভীরতার মধ্যে সম্পূর্ণ সমাহরণ করিয়া লইয়াছে। বনত্ৰ যেন তাহার সমস্ত বাণী নি:শেষ করিয়া দিয়া নিজের মনে কেবল ওঙ্কারমন্ত্রটি নীরবে জপ করিতেছে। আমার মনে হইতেছে, যেন তাপলিনী গৌরী তাহার বসন্তপুপাভরণ ত্যাগ করিয়া শুভ্রবেশে শিবের শুভ্ৰমূতি ধ্যান করিতেছেন। যে কামনা আগুন লাগায়, যে কামনা বিচ্ছেদ ঘটায়, তাহাকে তিনি ক্ষয় করিয়া ফেলিতেছেন। সেই অগ্নিদগ্ধ কামনার সমস্ত কালিমা একটু একটু করিয়া ঐ তো বিলুপ্ত হইয়া যাইতেছে ; যত দূর দেখা যায় একেবারে সাদায় সাদা হইয়া গেল, শিবের সহিত মিলনে কোথাও আর বাধা রহিল না। এবার যে শুভপরিণয় আসন্ন, আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডলের পুণ্য-আলোকে যাহার বার্তা লিখিত আছে এই তপস্তার গভীরতার মধ্যে তাহার নিগৃঢ় আয়োজন চলিতেছে ; উৎসবের সংগীত সেখানে ঘনীভূত হইতেছে, মালাবদলের ফুলের সাজি বিশ্বচক্ষুর অগোচরে সেখানে ভরিয়া ভরিয়া উঠিতেছে। এই তপস্তাকে বরণ করো, হে আমার চিত্ত, আপনাকে নত করিয়া নিস্তদ্ধ করিয়া দাও— শুভ্র শাস্তি তোমাকে স্তরে স্তরে আবৃত করিয়া স্থিরপ্রতিষ্ঠ গৃঢ়তার মধ্যে তোমার সমস্ত চেষ্টাকে আহরণ করিয়া লউক, নির্মলতার দেবদূত আসিয়া একবার এ জীবনের সমস্ত আবর্জনা এক প্রাপ্ত হইতে