পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఆు' - রবীন্দ্র-রচনাবলী ফাক দিয়ে দেখে এসেছি রাস্তার লোক-চলাচল ; কিন্তু ঐ ছাদের উপর যাওয়া লোকবসতির পিলপেগাড়ি পেরিয়ে যাওয়া। ওখানে গেলে কলকাতার মাথার উপর দিয়ে পা ফেলে ফেলে মন চলে যায় যেখানে আকাশের শেষ নীল মিশে গেছে পৃথিবীর শেষ সবুজে। নানা বাড়ির নানা গড়নের উচুনিচু ছাদ চোখে ঠেকে, মধ্যে মধ্যে দেখা ধায় গাছের কাকড়া মাথা। আমি লুকিয়ে ছাদে উঠতুম প্রায়ই ছুপুর বেলায়। বরাবর এই দুপুর বেলাটা নিয়েছে আমার মন ভুলিয়ে ও ষেন দিনের বেলাকার রাত্তির, বালক সন্ন্যাসীর বিবাগি হয়ে যাবার সময় । খড়খড়ির ভিতর দিয়ে হাত গলিয়ে ঘরের ছিটুকিনি দিতুম খুলে। দরজার ঠিক সামনেই ছিল একটা সোফা ; সেইখানে অত্যন্ত একলা হয়ে বস্তুম । আমাকে পাকড়া করবার চৌকিদার যারা, পেট ভরে খেয়ে তাদের ঝিমুনি এসেছে, গা মোড়া দিতে দিতে শুয়ে পড়েছে মাছুর জুড়ে । রাঙা হয়ে আসত রোদুর, চিল ডেকে বেত আকাশে । সামনের গলি দিয়ে হেঁকে যেত চুড়িওয়ালা । সেদিনকার দুপুরবেলাকার সেই চুপচাপ বেলা আজ আর নেই, আর নেই সেই চুপচাপ বেলার ফেরিওয়ালা । হঠাৎ তাদের হাক পৌছত যেখানে বালিশের উপর গোলা চুল এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকত বাড়ির বেী, দাসী ডেকে নিয়ে আসত ভিতরে, বুড়ো চুড়িওয়াল কচি হাত টিপে টিপে পরিয়ে দিত পছন্দমত বেলোয়ারি চুড়ি । সেদিনকার সেই বে। আজকের দিনে এখনো বৌএর পদ পায় নি, সেকেও, ক্লাসে সে পড়া মুখস্থ করছে। আর সেই চুড়িওয়াল হয়তো আজ সেই গলিতেই বেড়াচ্ছে রিকৃশ ঠেলে । ছাদটা ছিল আমার কেতাবে-পড়া মরুভূমি, ধু ধু করছে চার দিক। গরম বাতাস হ হ করে ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে, আকাশের নীল রঙ এসেছে ফিকে হয়ে । এই ছাদের মরুভূমিতে তখন একটা ওয়েলিস দেখা দিয়েছিল। আজকাল উপরের তলায় কলের জলের নাগাল নেই। তখন তেতালার ঘরেও তার দৌড় ছিল । লুকিয়ে-ঢোকা নাবার ঘর, তাকে যেন বাংলা দেশের শিশু লিভিংস্টন এইমাত্র খুঁজে বের করলে। কল দিতুম খুলে, ধারাজল পড়ত সকল গায়ে। বিছানার একখানা চাদর নিয়ে গা মুছে সহজ মাহুষ হয়ে বসতুম। ছুটির দিনটা দেখতে দেখতে শেষের দিকে এসে পৌছল। নীচের দেউড়ির ঘণ্টায় বাজল চারটে । রবিবারের বিকেল বেলায় আকাশটা বিত্র রকমের মুখ বিগড়ে আছে। আসছে-সোমবারের ই-করা মুখের গ্রহণ-লাগানো ছায়া তাকে গিলতে শুরু করেছে। নীচে এতক্ষণে পাহারা-এড়ানো ছেলের খোজ পড়ে গেছে | ايلر 발