পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

←☾Ꮼ রবীন্দ্র-রচনাবলী তীব্ৰহাস্তদিগ্ধ জালাময় কথাগুলি একটার পর একটা কেবলই তাহার মনে বাজিয়া উঠিত এবং তাহার নিদ্ৰা দূর করিয়া রাখিত। ‘আমি গোরার ছায়ার মতো, আমার নিজের কোনো পদার্থ নাই, ললিত এই বলিয়া অবজ্ঞা করেন, কিন্তু কথাটা সম্পূর্ণ অসত্য । ইহার বিরুদ্ধে নানাপ্রকার যুক্তি সে মনের মধ্যে জড়ো করিয়া তুলিত । কিন্তু এ-সমস্ত যুক্তি তাহার কোনো কাজে লাগিত না। কারণ, ললিতা তো স্পষ্ট করিয়া এ অভিযোগ তাহার বিরুদ্ধে আনে নাই— এ কথা লইয়া তর্ক করিবার অবকাশই তাহাকে দেয় নাই । বিনয়ের জবাব দিবার এত কথা ছিল, তবু সেগুলা ব্যবহার করিতে না পারিয়া তাহার মনে ক্ষোভ আরও বাড়িয়া উঠিতে লাগিল । অবশেষে কাল রাত্রে হারিয়াও যখন ললিতার মুখ সে প্রসন্ন দেখিল না তখন বাড়িতে আসিয়া সে নিতান্ত অস্থির হইয়া পড়িল । মনে মনে ভাবিতে লাগিল, সত্যই কি আমি এতই অবজ্ঞার পাত্র ? এইজন্যই সতীশের কাছে যখন সে শুনিল যে, ললিতাই তাহাকে গোলাপ ফুলদুটি সতীশের হাত দিয়া পাঠাইয়া দিয়াছে তখন সে অত্যন্ত একটা উল্লাস বোধ করিল। সে ভাবিল, অভিনয়ে যোগ দিতে রাজি হওয়াতেই সন্ধির নিদর্শনস্বরূপ ললিতা তাহাকে খুশি হইয়া এই গোলাপ দুটি দিয়াছে। প্রথমে মনে করিল ফুল দুটি বাড়িতে রাখিয়া আসি ; তাহার পরে ভাবিল, 'ন, এই শাস্তির ফুল মায়ের পায়ে দিয়া ইহাকে পবিত্র করিয়া আনি । সেদিন বিকালে বিনয় যখন পরেশবাবুর বাড়িতে গেল তখন সতীশ ললিতার কাছে তাহার ইস্কুলের পড়া বলিয় লইতেছে । বিনয় ললিতাকে কঠিল, “যুদ্ধেরই রঙ লাল, অতএব সন্ধির ফুল সাদা হওয়া উচিত ছিল ।” ললিত কথাটা বুঝিতে না পারিয়া বিনয়ের মুখের দিকে চাহিল । বিনয় তখন একটি গুচ্ছ শ্বেতকরবী চাদরের মধ্য হইতে বাহির করিয়া ললিতার সম্মুথে ধরিয়া কহিল, “আপনার ফুল দুটি যতই সুন্দর হোক, তবু তাতে ক্রোধের রঙটুকু আছে । আমার এ ফুল সৌন্দর্যে তার কাছে দাড়াতে পারে না, কিন্তু শাস্তির শুভ্র রঙের নম্রতা স্বীকার করে আপনার কাছে হাজির হয়েছে।" ললিত কৰ্ণমূল রাঙা করিয়া কছিল, “আমার ফুল আপনি কাকে বলছেন ?” বিনয় কিছু অপ্রতিভ হইয়া কহিল, "তবে তো ভুল বুঝেছি। সতীশবাবু, কার ফুল কাকে দিলে ?” সতীশ উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিল, “বা, ললিতাদিদি যে দিতে বললে !" বিনয় । কাকে দিতে বললেন ?