পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ←© বাড়িতে গেছেন— ললিতা কোনোমতেই গেল না। তিনি বলে গেছেন, আপনি লে আপনাকে বসিয়ে রাখতে— আপনার আজ পরীক্ষা হবে ।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি এর মধ্যে নেই ?” স্বচরিতা কছিল, “সবাই অভিনেতা হলে জগতে দর্শক হবে কে ?” বরদা নুন্দরী স্বচরিতাকে এ-সকল ব্যাপারে যথাসম্ভব বাদ দিয়া চলিতেন । তাই তাহার গুণপন দেখাইবার জন্ত এবারও ডাক পড়ে নাই । অন্য দিন এই দুই ব্যক্তি একত্র হইলে কথার অভাব হইত না । আজ উভয় পক্ষেই এমন বিঘ্ন ঘটিয়াছে যে, কোনোমতেই কথা জমিতে চাহিল না । সুচরিতা গোরার প্রসঙ্গ তুলিবে না পণ করিয়া আসিয়াছিল। বিনয়ও পূর্বের মতো সহজে গোরার কথা তুলিতে পারে না । ভাহাকে ললিতা এবং হয়তো এ বাড়ির সকলেই গোরার একটি ক্ষুদ্র উপগ্রহ বলিয়া মনে করে, ইহাই কল্পনা করিয়া গোরার কথা তুলিতে সে বাধা পায় । অনেক দিন এমন হইয়াছে বিনয় আগে আসিয়াছে, গোরা তাহার পরে আলিয়াছে, — আজও সেইরূপ ঘটিতে পারে ইহাই মনে করিয়া স্বচরিতা যেন এক প্রকার সচকিত অবস্থায় রছিল । গোরা পাছে আসিয়া পড়ে এই তাহার একটা ভয় ছিল এবং পাছে না আসে এই আশঙ্কাও তাছাকে বেঙ্গনা দিতেছিল । বিনয়ের সঙ্গে ছাড়া-ছাড়া ভাবে দুই-চারটে কথা হওয়ার পর স্বচরিতা আর কোনো উপায় না দেখিয়া সতীশের ছবির খাতাখানা লইয়া সতীশের সঙ্গে সেই সম্বন্ধে আলোচনা করিতে লাগিল । মাঝে মাঝে ছবি সাজাইবার ক্রটি ধরিয়া নিন্দ করিয়া সতীশকে রাগাইয়া তুলিল । সতীশ অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বাদামুবাদ করিতে লাগিল । আর বিনয় টেবিলের উপর তাহার প্রত্যাখ্যাত করবীগুচ্ছের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া লজ্জায় ও ক্ষোভে মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিল যে, অন্তত ভদ্রতার খাতিরেও আমার এই ফুল কয়ট ললিতার লওয়া উচিত ছিল । হঠাৎ একটা পায়ের শব্দে চমকিয়া স্বচরিতা পিছন ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল, হারানবাবু ঘরে প্রবেশ করিতেছেন। তাহার চমকটা অত্যন্ত স্বগোচর হওয়াতে স্বচরিতার মুখ লাল হইয়া উঠিল । হারানবাবু একটা চৌকিতে বলিয়া কছিলেন, “কই, আপনাদের গৌরবাবু আসেন নি ?” বিনয় হারানবাবুর এরূপ অনাবশুক প্রশ্নে বিরক্ত হইয়া কহিল, "কেন, তাকে কোনো थ८ब्रांजन च्षांटझ् ?" হারানবাবু কহিলেন, “আপনি আছেন অথচ তিনি নেই, এ তো প্রায় দেখা যায় না ; তাই জিজ্ঞাসা করছি *