পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা २b-१ করিয়া তাহাকে এই কথাপ্রসঙ্গে এতই নিবিষ্ট করিয়া রাখিয়াছিলেন যে, মেমসাহেব যখন পরেশবাবুর মেয়েদিগকে গাড়ি করিয়া ডাকবাংলায় পৌছাইয়া দিয়া ফিরিবার পথে র্তাহার স্বামীকে কহিলেন, “হারি ঘরে ফিরিতে হইবে”, তিনি চমকিয়া উঠিয়া ঘড়ি খুলিয়া কছিলেন, “বাই জোভ, আটটা বাজির কুড়ি মিনিট ।” গাড়িতে উঠিবার সময় হারানবাবুর কর নিপীড়ন করিয়া বিদায়সম্ভাষণপূর্বক কহিলেন, “আপনার সহিত আলাপ করিয়া আমার সন্ধ্যা খুব সুখে কাটিয়াছে।” হারানবাবু ডাকবাংলায় ফিরিয়া আসিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত তাহার আলাপের বিবরণ বিস্তারিত করিয়া ৰলিলেন । কিন্তু গোরার সহিত সাক্ষাতের কোনো উল্লেখমাত্র করিলেন না । २b~ কোনো প্রকার অপরাধ বিচার না করিয়া কেবলমাত্র গ্রামকে শাসন করিবার জন্ত সাতচল্লিশ জন আসামিকে হাজতে দেওয়া হইয়াছে । ম্যাজিস্ট্রেটের সহিত সাক্ষাতের পর গোরা উকিলের সন্ধানে বাহির হইল । কোনো লোকের কাছে খবর পাইল, সাতকড়ি হালদার এখানকার একজন ভালো উকিল । সাতকড়ির বাড়ি যাইতেই সে বলিয়া উঠিল, “বা:, গোরা যে ! তুমি এখানে ৷” গোর যা মনে করিয়াছিল তাই বটে— সাতকড়ি গোরার সহপাঠী ! গোর। কহিল, চর-ঘোষপুরের আসামিদিগকে জামিনে থালাস করিয়া তাহাদের মকদম৷ চালাইতে হইবে । সাতকড়ি কহিল, “জামিন হবে কে ?” গোরা কহিল, “আমি হব |" সাতকড়ি কহিল, “তুমি সাতচল্লিশ জনের জামিন হবে তোমার এমন কী সাধ্য আছে ?" 事 গোরা কছিল, “যদি মোক্তাররা মিলে জামিন হয় তার ফী আমি দেব ।” সাতকড়ি কহিল, “টাক কম লাগবে না ।” পরদিন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে জামিন খালাসের দরখাস্ত হইল। ম্যাজিস্ট্রেট গতকল্যকার সেই মলিনবন্ধধারী পাগড়ি-পরা বীরমূর্তির দিকে একবার কটাক্ষ নিক্ষেপ করিলেন এবং দরখাস্ত অগ্রাহ করিয়া দিলেন । চৌদ্দ বংগরের ছেলে হইতে আশি বৎসরের বুড়া পর্ষপ্ত হাজতে পচিতে লাগিল । i গোরা ইহাদের হইয়া লড়িবার জন্য সাতকড়িকে অনুরোধ করিল। সাতকড়ি কহিল, “সাক্ষী পাবে কোথায় ? যারা সাক্ষী হতে পারত তারা সবাই আসামি ।