পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وا\ ہ(Cا পায়ের ধুলা লইতেই ললিতা তাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করিল। মাগীমা তাড়াতাড়ি ঘর হইতে একটি মাদুর বাহির করিয়া পাতিয়া দিলেন এবং কহিলেন, “বাবা বোলো, মা বোলো ।” বিনয় ও ললিতা বলিলে পর তিনি তাহার আসনে বসিলেন এবং সতীশ তাহার গা ধেসিয়া বসিল । তিনি সতীশকে ডান হাত দিয়া নিবিড়ভাবে বেষ্টন করিয়া ধরিয়া কহিলেন, “আমাকে তোমরা জান না, আমি সতীশের মাসী হই– সতীশের মা আমার আপন দিদি ছিলেন।” এইটুকু পরিচয়ের মধ্যে বেশি কিছু কথা ছিল না কিন্তু মােসীমার মুখে ও কণ্ঠস্বরে এমন একটি কী ছিল যাহাতে তাহার জীবনের সুগভীর শোকের অশ্রুমার্জিত পবিত্র একটি আভাস প্রকাশিত হইয়া পড়িল । ‘আমি সতীশের মাসী হই’ বলিয়া তিনি যখন সতীশকে বুকের কাছে চাপিয়া ধরিলেন তখন এই রমণীর জীবনের ইতিহাস কিছুই না জানিয়াও বিনয়ের মন করুণায় ব্যথিত হইয়া উঠিল । বিনয় বলিয়া উঠিল, “একলা সতীশের মাসীমা হলে চলবে না ; তা হলে এতদিন পরে সতীশের সঙ্গে আমার ঝগড়া হবে । একে তে সতীশ আমাকে বিনয়বাৰু বলে, দাদা বলে না, তার পরে মাসীম থেকে বঞ্চিত করবে সে তে ; কে নোমতেই উচিত হবে না।” মন বশ করিতে বিনয়ের বিলম্ব হইত না । এই প্রিয়দর্শন প্রিয়ভাষী যুবক দেখিতে দেখিতে মসীমার মনে সতীশের সঙ্গে দখল ভাগ করিয়া লইল । মাসীমা জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাছা, তোমার মা কোথায় ?” বিনয় কহিল, “আমার নিজের মাকে অনেক দিন হল হারিয়েছি, কিন্তু আমার ম| নেই এমন কথা আমি মুখে আনতে পারব না ।” এই বলিয়া আনন্দময়ীর কথা স্মরণ করিবামাত্র তাহার দুই চক্ষু যেন ভাবের বাম্পে আৰ্দ্ৰ হুইয়া আসিল । দুই পক্ষে কথা খুব জমিয়া উঠিল । ইঙ্গদের মধ্যে আজ যে নূতন পরিচয় সে কথা কিছুতেই মনে হইল না । সতীশ এই কথাবার্তার মাঝখানে নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিকভাবে মন্তব্য প্রকাশ করিতে লাগিল এবং ললিতা চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। চেষ্টা করিলেও ললিতা নিজেকে সহজে যেন বাহির করিতে পারে না। প্রথমপরিচয়ের বাধা ভাঙিতে তাহার অনেক সময় লাগে । তা ছাড়া, আজ তাহার মন ভালো ছিল না। বিনয় যে অনায়াসেই এই অপরিচিতার সঙ্গে আলাপ জুড়িয়া দিল ইহা তাহার ভালো লাগিতেছিল না ; ললিতার যে সংকট উপস্থিত হইয়াছে