পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o צס রবীন্দ্র-রচনাবলী আমাকে আর-কোনো দণ্ড ম্যাজিস্ট্রেটের দিবার সাধ্য নাই। একা তোমার ছেলের কথা ভাবিয়ো না মা, আরও অনেক মায়ের ছেলে বিনা দোষে জেল খাটিয়া থাকে, একবার তাহাদের কষ্ট্রের সমান ক্ষেত্রে দাড়াইবার ইচ্ছা হইয়াছে ; এই ইচ্ছা এবার যদি পূর্ণ হয় তুমি আমার জন্য ক্ষোভ করিয়ো না । } মা, তোমার মনে আছে কি না জানি না, সেবার দুর্ভিক্ষের বছরে আমার রাস্তার ধারের ঘরের টেবিলে আমার টাকার থলিট রাখিয়া আমি পাচ মিনিটের জন্য অন্য ঘরে গিয়াছিলাম ফিরিয়া আসিয়া দেখি, থলিটা চুরি গিয়াছে। থলিতে আমার স্কলারশিপের জমানো পচাশি টাকা ছিল ; মনে সংকল্প করিয়াছিলাম আরও কিছু টাকা জমিলে তোমার পা ধোবার জলের জন্য একটি রুপার ঘটি তৈরি করাইয়া দিব । টাকা চুরি গেলে পর যখন চোরের প্রতি ব্যর্থ রাগে জলিয়া মরিতেছিলাম তখন ঈশ্বর আমার মনে হঠাৎ একটা স্ববুদ্ধি দিলেন, আমি মনে মনে কহিলাম, যে ব্যক্তি আমার টাকা লইয়াছে আজ দুর্ভিক্ষের দিনে তাহাকেই আমি সে টাকা দান করিলাম । যেমনি বলা অমনি আমার মনের নিষ্ফল ক্ষোভ সমস্ত শাস্ত হইয়া গেল । আজ আমার মনকে আমি তেমনি করিয়া বলাইয়াছি যে, আমি ইচ্ছা করিয়াই জেলে যাইতেছি । আমার মনে কোনো কঃ নাই, কাহারও উপরে রাগ নাই । জেলে আমি আতিথ্য লইতে চলিলাম। সেখানে আহারবিহারের কষ্ট আছে— কিন্তু এবারে ' ভ্রমণের সময় নানা ঘরে আতিথ্য লইয়াছি ; সে-সকল জায়গাতে তো নিজের অভ্যাস ও আবগুক -মত আরাম পাষ্ট নাই। ইচ্ছা করিয়া যাহা গ্রহণ করি সে কষ্ট তো কষ্টই নয় ; জেলের আশ্রয় আজ আমি ইচ্ছা করিয়াই গ্রহণ করিব ; যতদিন আমি জেলে থাকিব এক দিনও কেহ আমাকে জোর করিয়া সেখানে রাখিবে না ইহা তুমি নিশ্চয় জানিয়ো। পুথিবীতে যখন আমরা ঘরে বসিয়া অনায়াসেই আহারবিহার করিতেছিলাম, বাহিরের আকাশ এবং আলোকে অবাধ সঞ্চরণের অধিকার যে কত বড়ো প্রকাগু অধিকার তাহা অভ্যাসবশত অনুভবমাত্র করিতে পারিতেছিলাম না— সেই মুহূর্তেই পৃথিবীর বহুতর মানুষই দোষে এবং বিনা দোষে ঈশ্বরদত্ত বিশ্বের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া যে বন্ধন এবং অপমান ভোগ করিতেছিল আজ পর্যস্ত তাহদের কথা ভাবি নাই, তাহদের সঙ্গে