পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७br२ রবীন্দ্র-রচনাবলী এই বাড়িতে রাজ্যের অপরিচিত ঘরের মেয়ে জড়ো করিয়া পড়াইবার প্রস্তাবে হরিমোহিনী উদবিগ্ন হইয়া উঠিলেন । তিনি নিরিবিলি পূজা-অৰ্চনা লইয়া শুদ্ধ শুচি হইয়া থাকিতে চান, তাহার ব্যাঘাতের সম্ভাবনায় আপত্তি করিতে লাগিলেন । স্বচরিতা কহিল, “মাসি, তোমার ভয় নেই, যদি ছাত্রী জোটে তাদের নিয়ে আমাদের নীচের তলার ঘরেই কাজ চালাতে পারব, তোমার উপরের ঘরে আমরা উৎপাত করতে আসব না । তা ভাই ললিতা, যদি ছাত্রী পাওয়া যায় তা হলে আমি রাজি আছি ।” ললিত কহিল, “আচ্ছা দেখাই যাক-না।” হরিমোহিনী বার বার কহিতে লাগিলেন, “মা, সকল বিষয়েই তোমরা খৃস্টানের মতো হলে চলবে কেন ? গৃহস্থ ঘরের মেয়ে ইস্কুলে পড়ায় এ তো বাপের বয়সে শুনি नि ।” পরেশবাবুর ছাতের উপর হইতে আশ-পাশের বাড়ির ছাতে মেয়েদের মধ্যে আলাপ-পরিচয় চলিত । এই পরিচয়ের একটা মস্ত কণ্টক ছিল, পাশের বাড়ির মেয়েরা এ বাড়ির মেয়েদের এত বয়সে এপনো বিবাহ হইল না বলিয়া প্রায়ই প্রশ্ন এবং বিস্ময়প্রকাশ করিত । ললিতা এই কারণে এই ছাতের আলাপে পারতপক্ষে যোগ দিত না । এই ছাতে ছাতে বন্ধুত্ব-বিস্তারে লাবণ্যই ছিল সকলের চেয়ে উৎসাহী । অন্ত বাড়ির সাংসারিক ইতিবৃত্ত সম্বন্ধে তাহার কৌতুহলের সীমা ছিল না। তাছার প্রতিবেশীদের দৈনিক জীবনযাত্রার প্রধান ও অপ্রধান অনেক বিষয়ই দূর হইতে বায়ুযোগে তাহার নিকট আলোচিত হইত। চিরুনি হস্তে কেশসংস্কার করিতে করিতে মুক্ত আকাশতলে প্রায়ই তাহার অপরাহ্লসভা জমিত। ললিতা তাহার সংকল্পিত মেয়ে-ইস্কুলের ছাত্রীসংগ্রহের ভরি লাবণ্যের উপর অর্পণ করিল । লাবণ্য ছাতে ছাতে যখন এই প্রস্তাব ঘোষণা করিয়া দিল তখন অনেক মেয়েই উৎসাহিত হইয়া উঠিল । ললিতা খুশি হইয়া স্বচরিতার বাড়ির এক তলার ঘর ঝাট দিয়া, ধুইয়া, সাজাইয়া প্রস্তুত করিতে লাগিল । কিন্তু তাছার ইস্কুলম্বর শৃঙ্গই রহিয়া গেল । বাড়ির কর্তারা তাহদের মেয়েদের ভুলাইয়া পড়াইবার ছলে ব্রাহ্মবাড়িতে লইয়া যাইবার প্রস্তাবে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। এমনকি, এই উপলক্ষেই যখন তাহারা জানিতে পারিলেন পরেশবাবুর মেয়েদের সঙ্গে তাহীদের মেয়েদের আলাপ চলে তখন তাহাতে বাধা দেওয়াই র্তাহার কর্তব্য বোধ করিলেন । তাহদের মেয়েদের ছাতে ওঠা বন্ধ হইবার জো