পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দময়ী বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “সেখানে তো সে কাল গিয়েছিল ।” বিনয় কহিল, “আজও গেছে ।” এমন সময় প্রাঙ্গণে পালকির বেহারার আওয়াজ পাওয়া গেল। আনন্দময়ীর কোনো কুটুম্ব স্ত্রীলোকের আগমন কল্পনা করিয়া বিনয় বাহিরে চলিয়া গেল । ললিতা আসিয়া আনন্দময়ীকে প্রণাম করিল। আজ আনন্দময়ী কোনোমতেই ললিতার আগমন প্রত্যাশ করেন নাই । তিনি বিক্ষিত হইয়া ললিতার মুখের দিকে চাহিতেই বুঝিলেন, বিনয়ের দীক্ষা প্রভৃতি ব্যাপার লইয়া ললিতার একটা কোথাও সংকট উপস্থিত হইয়াছে, তাই সে তাহার কাছে আসিয়াছে । তিনি কথা পাড়িবার সুবিধা করিয়া দিবার জন্ত কহিলেন, “মা, তুমি এসেছ বড়ো খুশি হলুম। এইমাত্র বিনয় এখানে ছিলেন– কাল তিনি তোমাদের সমাজে দীক্ষা নেবেন আমার সঙ্গে সেই কথাই হচ্ছিল ।” ললিত কহিল, "কেন তিনি দীক্ষ নিতে যাচ্ছেন ? তার কি কোনো প্রয়োজন আছে ?” আনন্দময়ী আশ্চর্য হইয়া কহিলেন, “প্রয়োজন নেই মা ?” ললিত কহিল, “আমি তো কিছু ভেবে পাই নে ৷” আনন্দময়ী ললিতার অভিপ্রায় বুঝিতে ন পারিয়৷ চুপ করিয়া তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন । ললিতা মুখ নীচু করিয়া কহিল, “হঠাং এ রকম ভাবে দীক্ষা নিতে আসা তার পক্ষে অপমানকর । এ অপমান তিনি কিসের জন্যে স্বীকার করতে যাচ্ছেন ?" “কিসের জন্তে ? সে কথা কি ললিতা জানে না ? ইহার মধ্যে ললিতার পক্ষে কি আনন্দের কথা কিছুই নাই ? আনন্দময়ী কহিলেন, “কাল দীক্ষার দিন, সে পাক কথা দিয়েছে— এখন আর পরিবর্তন করবার জো নেই, বিনয় তো এইরকম বলছিল ।” ললিতা আনন্দময়ীর মুখের দিকে তাহার দীপ্ত দৃষ্টি রাখিয়া কছিল, “এ-সব বিষয়ে পাক কথার কোনো মানে নেই, যদি পরিবর্তন আবিস্তক হয় তা হলে করতেই হবে ।” আনন্দময়ী কহিলেন, "মা, তুমি আমার কাছে লজ্জা কোরো না, সব কথা তোমাকে খুলে বলি। এই এতক্ষণ আমি বিনয়কে বোঝাচ্ছিলুম তার ধর্মবিশ্বাস যেমনই থাক সমাজকে ত্যাগ করা তার উচিতও না, দরকারও না। মুখে যাই বলুক সেও যে সে কথা বোৰো না তাও বলতে পারি নে। কিন্তু, মা, তার মনের ভাৰ তোমার কাছে তো অগোচর নেই । সে নিশ্চয় জানে সমাজ পরিত্যাগ না করলে