পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8Ꮼbr রবীন্দ্র-রচনাবলী পরেশবাবু তাহার বিদ্রোহী কন্যার পিঠে ধীরে ধীরে হাত বুলাইয়া কছিলেন, “ব্যক্তিগত কারণে মন যখন উত্তেজিত থাকে তখন কি বিচার ঠিক হয় ? পূর্বপুরুষ থেকে সন্তানসন্ততি পর্যন্ত মানুষের যে একটা পূর্বাপরতা আছে তার মঙ্গল দেখতে গেলে সমাজের প্রয়োজন হয়— সে প্রয়োজন তো কৃত্রিম প্রয়োজন নয় । তোমাদের ভাবি বংশের মধ্যে ষে দূরব্যাপী ভবিষ্যৎ রয়েছে তার ভার যার উপরে স্থাপিত, সেই তোমাদের সমাজ– তার কথা কি ভাববে না ?” বিনয় কহিল, “হিন্দুসমাজ তো আছে।” পরেশবাবু কহিলেন, “হিন্দুসমাজ তোমাদের ভার যদি না নেয়, যদি না স্বীকার করে ?” বিনয় আনন্দময়ীর কথা স্মরণ করিয়া কহিল, "তাকে স্বীকার করাবার ভার আমাদের নিতে হবে । হিন্দুসমাজ তো বরাবরই নূতন নূতন সম্প্রদায়কে আশ্রয় দিয়েছে, হিন্দুসমাজ সকল ধর্মসম্প্রদায়েরই সমাজ হতে পারে।” পরেশবাবু কহিলেন, “মুখের তর্কে একটা জিনিসকে এক রকম করে দেখানো যেতে পারে, কিন্তু কাজে সে রকমটি পাওয়া যায় না। নইলে কেউ ইচ্ছা করে কি পুরাতন সমাজকে ছাড়তে পারে ? যে সমাজ মামুষের ধর্মবোধকে বাহু আচারের বেড়ি দিয়ে একই জায়গায় বন্দী করে বসিয়ে রাখতে চায় তাকে মানতে গেলে নিজেদের চিরদিনের মতো কাঠের পুতুল করে রাখতে হয় ।” h বিনয় কহিল, “হিন্দুসমাজের যদি সেই সংকীর্ণ অবস্থাই হয়ে থাকে তবে সেটা থেকে মুক্তি দেবার ভার আমাদের নিতে হবে ; যেখানে ঘরের জানলা-দরজা বাড়িয়ে দিলেই ঘরে আলো-বাতাস আসে সেখানে কেউ রাগ করে পাক বাড়ি ভূমিসাৎ করতে চায় না ।” ললিতা বলিয়া উঠিল, “বাবা, আমি এ-সমস্ত কথা বুঝতে পারি নে। কোনো সমাজের উন্নতির ভার নেবার জন্তে আমার কোনো সংকল্প নেই । কিন্তু চারি দিক থেকে এমন একটা অন্যায় আমাকে ঠেলা দিচ্ছে যে আমার প্রাণ যেন স্থাপিয়ে উঠছে। কোনো কারণেই এ-সমস্ত সহ করে মাথা নিচু করে থাকা আমার উচিত নয়। উচিত অনুচিতও আমি ভালো বুঝি নে— কিন্তু, বাবা, আমি পারব না ।” পরেশবাবু স্নিগ্ধস্বরে কছিলেন, "আরও কিছু সময় নিলে ভালো হয় না ? এখন তোমার মন চঞ্চল আছে।” ললিত কহিল, “সময় নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি নিশ্চয় জানি, অসত্য কথা ও অন্তায় অত্যাচার বেড়ে উঠতেই থাকবে । তাই আমার ভারি