পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૯૭૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার নিকট প্রত্যাশা করিবার আর কিছুই নাই ? সে কিন্তু এমন করিয়া ভাবে নাই । সে কিন্তু এখনো পথ চাহিয়া ছিল । স্বচরিত নিজের ভিতরকার এই অসহ্য কষ্টের বিরুদ্ধে লড়াই করিবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিতে লাগিল, কিন্তু সে মনের মধ্যে কোথাও কিছুমাত্র সাম্ভনা পাইল না । হরিমোহিনী স্বচরিতাকে অনেক ক্ষণ ভাবিবার সময় দিলেন । তিনি র্তাহার নিত্য নিয়মমত একটুখানি ঘুমাইয়াও লইলেন। ঘুম ভাঙিয়া স্বচরিতার ঘরে আসিয়া দেখিলেন, সে যেমন বসিয়া ছিল তেমনিই চুপ করিয়া বসিয়া আছে। তিনি কহিলেন, “রাধু, অত ভাবছিস কেন বল দেখি ? এর মধ্যে ভাববার অত কী কথা আছে ? কেন, গৌরমোহনবাবু অন্যায় কিছু লিখেছেন ?” স্বচরিত শাস্তস্বরে কহিল, “না, তিনি ঠিকই লিখেছেন।” হরিমোহিনী অত্যন্ত আশ্বস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “তবে আর দেরি করে কী হবে বাচ্ছা ?” স্বচরিত কহিল, "না, দেরি করতে চাই নে, আমি একবার বাবার ওপানে যাব ।” হরিমোহিনী কহিলেন, “দেখে রাধু, তোমার যে হিন্দুসমাজে বিবাহ হবে এ তোমার বাবা কখনো ইচ্ছা করবেন না, কিন্তু তোমার গুরু যিনি তিনি—” স্বচরিতা অসহিষ্ণু হইয়া বলিয়া উঠিল, "মাসি, কেন তুমি বার বার ওই এক কথা নিয়ে পড়েছ ? বিবাহ নিয়ে বাবার সঙ্গে আমি কোনো কথা বলতে যাচ্ছি নে । অামি তার কাছে আমনি একবার যাব ।” পরেশের সান্নিধ্যই যে সুচরিতার সাস্তনীর স্থল ছিল । পরেশের বাড়ি গিয়া স্বচরিতা দেখিল, তিনি একটা কাঠের তোরঙ্গে কাপড়চোপড় গোছাইতে ব্যস্ত । স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, একি ?” পরেশ একটু হাসিয়া কছিলেন, "মা, আমি সিমলা পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছি-- কাল সকালের গাড়িতে রওনা হব ।” পরেশের এই হাসিটুকুর মধ্যে মস্ত একটা বিপ্লবের ইতিহাস প্রচ্ছন্ন ছিল তাহা স্বচরিতার অগোচর রহিল না । ঘরের মধ্যে র্তাহার স্ত্রী কন্যা ও বাহিরে তাহার বন্ধুবান্ধবেরা তাহাকে একটুও শাস্তির অবকাশ দিতেছিল না । কিছু দিনের জন্যও যদি তিনি দূরে গিয়া কাটাইয়া না আসেন, তবে ঘরে কেবলই তাহাকে কেন্দ্র করিয়া একটা আবর্ত ঘুরিতে থাকিবে । কাল তিনি বিদেশে যাইবার সংকল্প করিয়াছেন,