পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(obro রবীন্দ্র-রচনাবলী উদ্দেশের পথ হইতে সমস্ত অনাবশ্বক পদার্থকে সে অনেকটা পরিমাণে দূর করিয়া দিতে পারে। এই ক্ষমতাবলেই সে এই জগতের অসীম বৈচিত্র্যের মধ্যেও আপনার নিকটে আপনার প্রাধান্য রক্ষা করিতে পারিয়াছে। পুরাণে পাঠ করা যায়, পুরাকালে কোনো কোনো মহাত্মা ইচ্ছামৃত্যুর ক্ষমতা লাভ করিয়াছিলেন । আমার মনের ইচ্ছান্ধত ইচ্ছাবধিরতার শক্তি আছে এবং এই শক্তি তাহাকে প্রতিপদে ব্যবহার করিতে হয় বলিয়া জন্ম হইতে মৃত্যুকাল পর্যন্ত জগতের অধিকাংশই তাহার চেতনার বহির্ভাগ দিয়া চলিয়া যায় । সে নিজে বিশেষ উদযোগী হইয়া যাহা গ্রহণ করে এবং নিজের আবশ্বক ও প্রকৃতি -অনুসারে গঠিত করিয়া লয় তাহাই সে উপলব্ধি করে ; চতুর্দিকে, এমন-কি মানস প্রদেশেও, যাহা ঘটিতেছে, যাহা উঠিতেছে, তাহার সে ভালোরূপ খোজ রাখে না । # সহজ অবস্থায় আমাদের মানসাকাশে স্বপ্নের মতো যে-সকল ছায়া এবং শব্দ যেন কোন অলক্ষ্য বায়ুপ্রভাবে দৈবচালিত হইয়া কখনো সংলগ্ন কখনো বিচ্ছিন্ন ভাবে বিচিত্র আকার ও বর্ণ -পরিবর্তন-পূর্বক ক্রমাগত মেঘরচনা করিয়া বেড়াইতেছে তাহারা যদি কোনো অচেতন পটের উপর নিজের প্রতিবিম্বপ্রবাহ চিহ্নিত করিয়া যাইতে পারিত তবে তাহার সহিত আমাদের আলোচ্য এই ছড়াগুলির অনেক সাদৃশ্য দেখিতে পাইতাম । এই ছড়াগুলি আমাদের নিয়তপরিবর্তিত অন্তরাকাশের ছায়ামাত্র, তরল স্বচ্ছ সরোবরের উপর মেঘক্রীড়িত নভোমণ্ডলের ছায়ার মতো । সেইজন্যই বলিয়াছিলাম ইহারা আপনি জন্মিয়াছে। উদাহরণস্বরূপে এইখানে দুই-একটি ছড়া উদ্ভূত করিবার পূর্বে পাঠকদের নিকট মার্জনা ভিক্ষা করি। প্রথমত, এই ছড়াগুলির সঙ্গে চিরকাল যে স্নেহার্দ্র সরল মধুর কণ্ঠ ধ্বনিত হইয়া আসিয়াছে আমার মতো মর্যাদাভীরু গম্ভীরস্বভাব বয়স্ক পুরুষের লেখনী হইতে সে ধ্বনি কেমন করিয়া ক্ষরিত হইবে। পাঠকগণ আপন গৃহ হইতে, আপন বাল্যস্মৃতি হইতে, সেই স্বধান্নিগ্ধ মুরটুকু মনে মনে সংগ্ৰহ করিয়া লইবেন । ইহার সহিত যে স্নেহটি, যে সংগীতটি, যে সন্ধ্যাপ্রদীপালোকিত সৌন্দর্যচ্ছবিটি চিরদিন একাত্মভাবে মিশ্রিত হইয়া আছে সে আমি কোন মোহমন্ত্রে পাঠকদের সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিব ! ভরসা করি, এই ছড়াগুলির মধ্যে সেই মোহমন্ত্রটি আছে। দ্বিতীয়ত, আটঘাট-বাধা রীতিমত সাধুভাষার প্রবন্ধের মাঝখানে এই-সমস্ত গৃহচারিণী অকৃতবেশ অসংস্কৃত মেয়েলি ছড়াগুলিকে দাড় করাইয়া দিলে তাছাদের প্রতি কিছু অত্যাচার করা হয়— যেন আদালতের সাক্ষ্যমঞ্চে ঘরের বধূকে উপস্থিত করিয়া জেরা করা। কিন্তু উপায় নাই। আদালতের নিয়মে আদালতের কাজ হয়,