পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন OS ۹ বিপ্ৰ, অর্ধ পাদ বৈশ্য, বাকি সমস্তটাই শূদ্র । উপাধ্যায়। আচার্যদেব, সুভদ্র আমাদের আয়তনের উত্তর দিকের জানলা খুলে বাইরে দৃষ্টিপাত করেছে । আচার্য। উত্তর দিকটা তো একজটা দেবীর । উপাধ্যায়। সেই তো ভাবনা । আমাদের আয়তনের মন্ত্রঃপূত রুদ্ধ বাতাসকে সেখানকার হাওয়া কতটা দূর পর্যন্ত আক্রমণ করেছে বলা তো যায় না। উপাচার্য । এখন কথা হচ্ছে এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত কী । আচার্য। আমার তো স্মরণ হয় না । উপাধ্যায় বোধ করি।-- 录 . উপাধ্যায়। না, আমিও তো মনে আনতে পারি নে। আজ তিনশো বছর এ প্ৰায়শ্চিত্তটার প্রয়োজন হয় নি- সবাই ভুলেই গেছে। ঐ-যে মহাপঞ্চক আসছে— যদি কারও জানা থাকে তো সে ওর । মহাপঞ্চকের প্রবেশ উপাধ্যায় । মহাপঞ্চক, সব শুনেছ বোধ করি । মহাপঞ্চক । সেইজন্যেই তো এলুম ; আমরা এখন সকলেই অশুচি, বাহিরের হাওয়া আমাদের আয়তনে প্ৰবেশ করেছে । উপাচার্য। এর প্রায়শ্চিত্ত কী, আমাদের কারও স্মরণ নেই-তুমিই বলতে পারো । মহাপঞ্চক । ক্রিয়াকল্পতরুতে এর কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না- একমাত্র ভগবান জ্বলনানন্তকৃত আধিকমিক বর্ষায়ণে লিখছে অপরাধীকে ছয় মাস মহাতামস সাধন করতে হবে। উপাচার্য । মহাতামস ? ل মহাপঞ্চক । হা, আলোকের এক রশ্মিমাত্র সে দেখতে পাবে না। কেননা আলোকের দ্বারা যে অপরাধ অন্ধকারের দ্বারাই তার ক্ষালন । উপাচার্য। তা হলে, মহাপঞ্চক, সমস্ত ভার তোমার উপর রইল । পুস্থায়। চলে, আমিও তোমার সঙ্গে যাই। ততক্ষণ সুভদ্রকে হিঙ্গুমৰ্দনকুণ্ডে স্নান করিয়ে (히 | সকলের গমনোদ্যম আচার্য। শোনো, প্রয়োজন নেই। উপাধ্যায় । কিসের প্রয়োজন নেই ? আচার্য। প্ৰায়শ্চিত্তের । s মহাপঞ্চক। প্রয়ােজন নেই বলছেন ! আধিকাৰ্মিক বর্ষায়ণ খুলে আমি এখনই দেখিয়ে দিচ্ছি— আচার্য। দরকার নেই- সুভদ্রকে কোনো প্ৰায়শ্চিত্ত করতে হবে না, আমি আশীর্বাদ করে তারমহাপঞ্চক । এও কি কখনো সম্ভব হয় ? যা কোনো শাস্ত্রে নেই। আপনি কি তাই আচার্য। না, হতে দেব না, যদি কোনো অপরাধ ঘটে সে আমার । তোমাদের ভয় নেই। উপাধ্যায়। এরকম দুর্বলতা তো আপনার কোনোদিন দেখি নি। এই তো সেবার অষ্টাঙ্গশুদ্ধি উপবাসে তৃতীয় রাত্রে বালক কুশলশীল জল জল করে পিপাসায় প্রাণত্যাগ করলে কিন্তু তবু তার মুখে যখন এক বিন্দু জল দেওয়া গেল না। তখন তো আপনি নীরব হয়ে ছিলেন । তুচ্ছ মানুষের প্রাণ আজ আছে কাল নেই, কিন্তু সনাতন ধর্মবিধি তো চিরকালের । সুভদ্রকে লইয়া পঞ্চকের প্রবেশ পঞ্চক । ভয় নেই সুভদ্ৰ, তোর কোনো ভয় নেই।-এই শিশুটিকে অভয় দাও প্রভু। আচাৰ্য । বৎস, তুমি কোনো পাপ কর নি। বৎস, যারা বিনা অপরাধে তোমাকে হাজার হাজার বৎসর ধরে মুখ বিকৃত করে ভয় দেখাচ্ছে পাপ তাদেরই। এসো পঞ্চক। [সুভদ্রকে কোলে লইয়া পঞ্চকের সঙ্গে প্ৰস্থান