পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপ । শব্দতত্ত্ব V» Sq \D হইত। তাহার অনেক দৃষ্টান্ত আছে ; যথা বড় বড়ি, গোলা গুলি, খোটা খুঁটি, দড়া দড়ি, ঘড়া ঘটি, ছোরা চুরি, জাতা জাতি, আংটা আঁটি, শিকল শিকলি ইত্যাদি। " - প্রাচীন কাব্যে দেখা যায়, সব অপেক্ষা গণ শব্দের প্রচলন অনেক বেশি। মুকুন্দরামের কবিকঙ্কণচণ্ডী দেখিলে তাহার প্রমাণ হইবে ; অন্য বাংলা প্ৰাচীন কাব্য এক্ষণে লেখকের হস্তে বর্তমান নাই, এইজন্য তুলনা করিবার সুযোগ হইল না। r এই গণ শব্দ হইতে গুলা হওয়াও অসম্ভব নহে। কারণ, গণ শব্দের অপভ্ৰংশ প্রাকৃত গণু। জানি না ধ্বনিবিকারের নিয়মে গণু হইতে গলু ও গুলো হওয়া সুসাধ্য কি না । কিন্তু কেরু হইতেই যে গুলো হইয়াছে লেখকের বিশ্বাসের ঝোকটা সেই দিকে । তাহার কারণ আছে ; প্রথমত রা বিভক্তির সহিত তাহার যোগ পাওয়া যায়, দ্বিতীয়ত নেপালি হেরু শব্দের সহিত তাহার সাদৃশ্য আছে, তৃতীয় যাহার যুক্তিপরম্পরা অপেক্ষাকৃত দুরূহ এবং যাহা প্রথম শ্রুতিমাত্রই প্রত্যয় আকর্ষণ করে না উদ্ভাবকের কল্পনা তাহার প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয় । এইখানে বলা আবশ্যক, উড়িয়া ও আসামির সহিত যদিচ বাংলা ভাষার ঘনিষ্ঠ নৈকটা আছে তথাপি বহুবচন সম্বন্ধে বাংলার সহিত তাহার মিল পাওয়া যায় না । উড়িয়া ভাষায় মানে শব্দযোগে বহুবচন হয় । ঘর একবচন, ঘরমানে বহুবচন । বীমস বলেন, এই মানে শব্দ পরিমাণ হইতে উদ্ভূত ; হার্নলে বলেন, মানব হইতে। প্রাচ্য হিন্দিতে মনুষ্যগণকে মনই বলে, মানে শব্দ তাহারই অনুরূপ। হিন্দিতে কর্তৃকারক বহুবচন লোগ (লোক) শব্দযোগে সিদ্ধ হয় ; ঘোড়ালোগা— ঘোড়াসকল । : শ্রেণীবাচক বহুবচনে লোক শব্দ ব্যবহৃত হয় ; যথা, পণ্ডিতলোক মুখলোক গরিবলোক h আসামি ভাষার বিলাক হঁত এবং বোর শব্দযোগে বহুবচন নিম্পন্ন হয় । তন্মধ্যে হঁত শব্দ সম্বন্ধে আলোচনা করা হইয়াছে। বিলাক এবং বোর শব্দের উৎপত্তি নির্ণয় সুকঠিন । যাহাই হউক বিস্ময়ের বিষয় এই যে, কর্তৃকারক এবং সম্বন্ধের বহুবচনে বাংলা প্ৰায় সমুদয় গৌড়ীয় ভাষা হইতে স্বতন্ত্র। কেবল রাজপুতানি এবং নেপালি হিন্দির সহিত তাহার কথঞ্চিৎ সাদৃশ্য আছে। কিন্তু মনোযোগপূর্বক অনুধাবন করিলে অন্যান্য গৌড়ীয় ভাষার সহিত বাংলার এই সকল বহুবচন রূপের যোগ পাওয়া যায়, এই প্ৰবন্ধে তাহারই অনুশীলন করা গেল । সম্বন্ধের একবচনেও অপর গৌড়ীয় ভাষার সহিত বাংলার প্রভেদ আছে তাহা পূর্বে বলা হইয়াছে, কেবল মাড়োয়ারি ও মেৱারি রো বিভক্তি বাংলার র বিভক্তির সহিত সাদৃশ্যবান । এ কথাও বলা আবশ্যক উড়িয়া ও আসামি ভাষার সহিতও এ সম্বন্ধে বাংলার প্রভেদ নাই। অপরাপর গৌড়ীয় ভাষায় কা প্রভৃতি যোগে ষষ্ঠীবিভক্তি হয় । কিন্তু একটি বিষয় বিশেষরূপে লক্ষ করিবার আছে। উত্তম পুরুষ এবং মধ্যম পুরুষ সর্বনাম শব্দে কী একবচনে কী বহুবচনে প্রায় কোথাও ষষ্ঠীতে ককারের প্রয়োগ নাই, প্রায় সর্বত্রই রকার ব্যবহৃত হইয়াছে ; যথা, সাধুহিন্দি- একবচনে মেরা, বহুবচনে হামারা । কনীেজি- মেরো, হমারো। ব্ৰজভাষা- মেরেী, হামারেী । মাড়োয়ারি- মারো, ক্ষীরো । মেৱারি- ক্ষারো, হঁহুৱরারো। অৱধি- মোর, হামার। রিৱাই- মৱার, হমহার। মধ্যম পুরুষেও— তেরা তুমহারা তোর তুমার, তুৱার তুমহার প্রভৃতি প্রচলিত। কোনো কোনাে ভাষায় বহুবচনে কিঞ্চিৎ প্রভেদ দেখা যায় ; যথা, নেপালি— হামে রুকে, ভোজপুরি- হমরণকে, মাগধী— হমরণীকে, মৈথিলী— হামরাসভকে । অন্য গীেড়ীয় ভাষায় কেবল সর্বনামের ষষ্ঠী বিভক্তিতে যে রকার বর্তমান, বাংলায় তাহা সর্বনাম ও বিশেষ্যে সর্বত্রই বর্তমান। ইহা হইতে অনুমান করি, ককার অপেক্ষা রকার ষষ্ঠীবিভক্তির প্রাচীনতর এখানে আর-একটি লক্ষ করিবার বিষয় আছে। একবচনে যেখানে তেরা বহুবচনে সেখানে ।