পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । সমাজ V6:S অধ্যায়ে চতুর্দশ পঞ্চদশ ও ষোড়শ শ্লোক পাঠ করিবেন, আমি কেবল সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শ্লোক এইখানে পাঠ করি। - শয্যাসনামলংকারিং কামং ক্রোধমনার্জবং দ্রোহভাবিং কুচর্যাঞ্চ স্ত্রীভ্যো মনুরকল্পয়ৎ । শয্যা, আসন, অলংকার, কাম, ক্ৰোধ, কুটিলতা, পরহিংসা ও কুৎসিত আচার স্ত্রীলোক হইতে হয় ইহা মনু কল্পনা করিয়াছেন । নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্মেব্যিবস্থিতঃ । নিরিন্দ্রিয়াহ্যমন্ত্রাশ্চ স্ক্রিয়োহনৃতমিতি স্থিতিঃ । যেহেতুক স্ত্রীলোকের মন্ত্রদ্বারা কোনো ক্রিয়া নাই ধর্মের এইরূপ ব্যবস্থা, অতএব ধৰ্মজ্ঞানহীন মন্ত্র হীন স্ত্রীগণ অনুত, মিথ্যা পদার্থ। । এ-সকল শ্লোকের দ্বারা স্ত্রীলোকের সম্মান কিছুমাত্র প্রকাশ পায় না। চন্দ্রনাথবাবু তাহার প্রবন্ধের একস্থলে হিন্দুবিবাহের সহিত কোমতের মতের তুলনা করিয়াছেন । হিন্দুশাস্ত্র সম্বন্ধে আমার জ্ঞান যতদূর কোমৎশাস্ত্র সম্বন্ধে তাহা অপেক্ষাও অনেক অল্প, কিন্তু চন্দ্রনাথবাবুই এককথায় স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে কোমতের মত ব্যক্ত করিয়াছেন।” সেই স্থানটি উদ্ধৃত করি : বিবাহের উদ্দেশ্য ও আবশ্যকতা সম্বন্ধে হিন্দুশাস্ত্রকারদিগের মত যে কতদূর পাকা তাহা এতদিনের পর যুরোপে কেবল কোমতের শিষ্যেরা কিয়ৎপরিমাণে বুঝিতে সক্ষম হইয়াছেন। কোমৎ মুক্তকণ্ঠে বলিয়াছেন যে, ধর্মপ্রবৃত্তি এবং হৃদয়ের গুণ সম্বন্ধে স্ত্রী পুরুষ অপেক্ষা অনেক গুণে শ্রেষ্ঠ এবং সেইজন্য স্ত্রীর সাহায্য ব্যতিরেকে পুরুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন পূর্ণতা লাভ করিতে পারে না । বলা বাহুল্য কোমৎ মুক্তকণ্ঠে যাহা বলিয়াছেন মনু মুক্তকণ্ঠে ঠিক তাহা বলেন নাই। মহাভারতে ভীষ্ম ও যুদ্ধষ্ঠিরও মুক্তকণ্ঠে কোমতের মত সমর্থন করেন নাই। অনুশাসনপর্বে অষ্টক্রিংশত্তম অধ্যায়ে স্ত্রীচরিত্র সম্বন্ধে ভীষ্ম ও যুধিষ্ঠিরে যে-কথোপকথন হইয়াছে, বর্তমান সমাজে তাহার সমগ্র ব্যক্ত করিবার যোগ্য নহে। অতএব তাহার স্থানে স্থানে পাঠ করি। কালীসিংহ কর্তৃক অনুবাদিত মহাভারত আমার অবলম্বন । কামিনীগণ সৎকুলসভূত রূপসম্পন্ন ও সধবা হইলেও স্বধৰ্ম পরিত্যাগ করে। উহাদের পাপপরায়ণ আর কেহই নাই। উহারা সকল দোষের আকার । উহাদের অন্তঃকরণে কিছুমাত্র ধর্মভয় নাই । তুলাদণ্ডের একদিকে যম, বায়ু, মৃত্যু, পাতাল, বাড়বানল, ক্ষুরধার, বিষ, সর্প ও বহ্নি এবং অপরদিকে । স্ত্রীজাতিরে সংস্থাপন করিলে স্ত্রীজাতি কখনােই ভয়ানকত্বে উহাদের অপেক্ষা ন্যূন হইবে না। বিধাতা যে-সময় সৃষ্টিকার্যে প্রবৃত্ত হইয়া মহাভূতসমুদয় ও স্ত্রীপুরুষের সৃষ্টি করেন, সেই সময়েই স্ত্রীদিগের দোষের সৃষ্টি করিয়াছেন । ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির বলিতেছেন : পুরুষে রোদন করিলে উহারা কপটে রোদন এবং হাস্য করিলে উহারা কপটে হাস্য করিয়া থাকে । কামিনীরা সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যারে সত্য বলিয়া প্রতিপন্ন করিতে পারে। ইত্যাদি ইত্যাদি। স্ত্রীলোকের চরিত্র সম্বন্ধে যাহাদের এরূপ বিশ্বাস তাহারা স্ত্রীলোককে যথার্থ সম্মান করিতে অক্ষম, মুখত এঁলােক সম্বন্ধে কােম্য-শষ্যগণের মতের সহিত তাহদের মতের ঐক্য হইবার সম্ভাবনা বিবাহ সম্বন্ধে আলোচনা করিতে হইলে প্রথমত স্ত্রীলোকের ও পুরুষের অবস্থা সম্বন্ধে আলোচনা করিতে হয় । চন্দ্রনাথবাবু শাস্ত্ৰ উদ্ধৃত করিয়া বলিতেছেন- প্রাচীন সমাজে স্ত্রীলোকের সবিশেষ সম্মান ছিল, কিন্তু আমি দেখিতেছি, শাস্ত্ৰে স্ত্রীলোকের অসম্মানেরও প্রমাণ আছে। অতএব এ বিষয়ে এখনো নিঃসংশয়ে কিছু বলিবার সময় হয় নাই। । দ্বিতীয় দ্রষ্টব্য বিষয় এই যে, বিবাহিতা স্ত্রীলোকের অবস্থা সেকালে কিরূপ ছিল । চন্দ্রনাথবাবু