ASV রবীন্দ্র-রচনাবলী ܓ বর্তমানসংখ্যক “ভারতী’তে “ঐতিহাসিক যৎকিঞ্চিৎ নামক ক্ষুদ্র প্রবন্ধটি যিনি লিখিয়াছেন, তিনি གྱུ་བག་མའི་ ইতিহাস-লেখকগণের শীর্ষস্থানীয় । * তাহার প্রস্তাবটির প্রতি পাঠকগণ মনোযোগ м ইতিহাসের সত্য মিথ্যা নির্ণয় করা বড়ো কঠিন । কথা সজীব পদার্থের মতো বাড়িয়া চলে ; মুখে মুখে কালে কালে তাহার পরিবর্তন ঘটিতে থাকে। সৃজনশক্তি মানুষের মনের স্বাভাবিক শক্তিযে-কোনো ঘটনা, যে-কোনো কথা তাহার হস্তগত হয় তাহাকে সে অবিকৃত রাখিতে পারে না, কতকটা । নিজের ছাচে ঢালিয়া তাহাকে গড়িয়া লয় । এইজন্য আমরা প্ৰত্যহই একটি ঘটনার নানা পাঠান্তর নানা লোকের নিকট পাইয়া থাকি । w কেহ কেহ এইরূপ প্রাত্যহিক ঘটনার দৃষ্টান্ত দেখাইয়া ইতিহাসের সত্যতা সম্বন্ধে আগাগােড়া সন্দেহ প্রকাশ করেন । কিন্তু একটি কথা তাহারা ভুলিয়া যান, ঐতিহাসিক ঘটনার জনশ্রুতি বহুতর লোকের মন হইতে প্ৰতিফলিত হইয়া আসে এবং সেই ঘটনার বিবরণে সাময়িক লোকের মনের ছাপ পড়িয়া যায় । তাহা হইতে ঘটনার বিশুদ্ধ সত্যতা আমরা না পাইতেও পারি। কিন্তু তৎসাময়িক অনেক লোকের মনে তাহা কিরূপ প্ৰতিভাত হইয়াছিল সেটা পাওয়া যাইতে পারে । M− অতীত সময়ের অবস্থা কেবল ঘটনার দ্বারা নির্ণয় হয় না, লোকের কাছে তাহা কিরূপ ঠেকিয়াছিল সেও একটা প্ৰধান দ্রষ্টব্য বিষয় । অতএব ঐতিহাসিক ঘটনার জনশ্রুতিতে বাস্তব ঘটনার সহিত মানবমন মিশ্রিত হইয়া যে-পদাৰ্থ উদ্ভূত হয় তাহাই ঐতিহাসিক সত্য। সেই সত্যের বিবরণই মানবের নিকট চিরন্তন কৌতুকাবহ এবং শিক্ষার বিষয় । A এই বিচিত্ৰ জনশ্রুতি এবং জীর্ণ উপকরণমূলক ইতিহাসে এমন অনেকটা অংশই থাকে যাহার প্রমাণ অপ্ৰমাণ ঐতিহাসিকের ব্যক্তিগত প্ৰকৃতির উপর নির্ভর করে। দুই সাক্ষীর মধ্যে কোন সাক্ষীকে বিশ্বাস করিব তাহা অনেক সময়ে কেবলমাত্র বিচারকের স্বভাব ও পূর্বসংস্কারের দ্বারা স্থিরীকৃত হয়। ইংরেজ মিথ্যা বলে না, ইংরেজ জজ ইহা কতকটা স্বভাবত এবং কতকটা টানিয়াও বিশ্বাস করেন ; এই প্ৰবৃত্তি ও বিশ্বাস -বশত তাহারা অন্যদেশীয়দের প্রতি অনেক সময়ে অবিচার করিয়া থাকেন, তাহা ইংরেজ ব্যতীত আর-সকলেই অনুভব করিতে পারেন। ইতিহাসে এইপ্ৰকার ব্যক্তিগত সংস্কারের লীলা যখন অবশ্যম্ভাবী, তখন এই কথা সহজেই মনে উদয় হয়, আমরা ক্রমাগত বিদেশীয় ঐতিহাসিকের বিজাতীয় সংস্কারের দ্বারা গঠিত ইতিহাসপাঠে পীড়ন কেন সহ্য করিব । আমরা যে-ইতিহাস সংকলন করিব, তাহাও যে বিশুদ্ধ সত্য হইবে এ আশা করি না ; কিন্তু ইতিহাসের যে-অংশ প্রমাণ অপেক্ষা ঐতিহাসিকের মানসিক প্রকৃতির উপর বেশি নির্ভর করে, সে-অংশে আমাদের স্বজাতীয় প্রকৃতির সৃজনকর্তৃত্ব আমরা দেখিতে চাই। তাহা ছাড়া ইতিহাস একতরফা না হইয়া দুইতরফা হইলে সত্যনিৰ্ণয় সহজ হয়। বিদেশী ঐতিহাসিক এক ভাবে সাক্ষী সাজাইবেন এবং স্বদেশী ঐতিহাসিক অন্য ভাবে সাক্ষী সাজাইবেন, তাহাতে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের কাজের সুবিধা হয়। যাহা হউক, বিদেশীলিখিত ভারতবর্ষের ইতিহাসকে বিনা প্রশ্নে বিনা বিচারে গ্রহণ ও মুখস্থ করিয়া, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া ফাস্ট প্রাইজ পাওয়া আমাদের গীেরবের বিষয় হইতেছে না। কোনো ইতিহাসই কোনোকালে প্রশ্ন ও বিচারের অতীত হইতে পারে না। যুরোপীয় ইতিহাসেও ভুরি ভুরি চিরপ্রচলিত দৃঢ়নিবদ্ধ বিশ্বাস নব নব সমালোচনার দ্বারা তিরস্কৃত হইতেছে। আমাদের দেশীয় ইতিহাস হইতে মিথ্যা বাছিতে গেলে তাহার উজাড় হইবার সম্ভাবনা আশঙ্কা করি। লেখক মহাশয় আমাদের দেশীয় ইতিহাস সমালোচনা ও সংকলনের জন্য একটি ঐতিহাসিক সভা ১ অক্ষয়কুমার মৈত্ৰেয়
