পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলা শব্দতত্ত্ব we)ዒx© সামান্য বিশেষ্য পদ নাম দেওয়া হইয়াছে। বলা আবশ্যক ইংরেজি common names ও বাংলা সামান্য বিশেষ্যে প্রভেদ আছে। বাংলায় আমরা যেখানে বলি, “এইখানে ছাগল আছে। সেখানে 3°Css (V (r. There is a goat here' feet There are goats here' 37tails age সাধারণভাবে বলা হইতেছে। ছাগলীজাতীয় জীব আছে। তাহা কোনো একটি বিশেষ ছাগল বা বহু ছাগল তাঁহা নির্দেশ করিবার প্রয়োজন ঘটে নাই বলিয়া নির্দেশ করা হয় নাই, কিন্তু ইংরেজিতে এরূপ স্থলেও বিশেষ্যপদকে article-যোগে বা বহুবচনের চিহ্নযোগে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করা 323Cf (t Cric 4G There is a bird in the cage' <! There are birds in the cage” আমরা উভয় স্থলেই বলি, 'খাঁচায় পাখি আছে- কারণ এ স্থলে খাঁচার পাখি এক কিংবা বহু তাহা বক্তব্য নহে। কিন্তু ‘খাঁচার মধ্যে পাখি নামক পদার্থ আছে ইহাই বক্তব্য। এই কারণে, এ-সকল স্থলে বাংলায় সামান্য বিশেষ্যপদই ব্যবহৃত হয়। এই সামান্য বিশেষ্যপদ যখন জীববাচক হয় প্রায় তখনই তাহাতির্যকরূপ গ্রহণ করে। কখনাে বলি না, গাছে নড়ে, বলি গাছ নড়ে'। কিন্তু বানরে লাফােয়’ বলিয়া থাকি। কেবল কর্তৃকারকেই এই শ্রেণীর তির্যকরূপের প্রয়োগ দেখা যায়, কিন্তু তাহার বিশেষ নিয়ম আছে। প্লেগে ধরে বা ম্যালেরিয়ায় ধরে- এরকম স্থলে প্লেগ ও ম্যালেরিয়া বস্তুত অচেতন পদার্থ। কিন্তু আমরা বলিবার সময় উহাতে চেতনতা আরোপ করিয়া উহাকে আক্রমণ ক্রিয়ার সচেষ্টক কর্তা বলিয়াই ধরি। তাই উহা রূপকভাবে চেতন বাচকের পর্যায় স্থান লাভ করিয়া তির্যকরূপ প্রাপ্ত হয়। মোটের উপর বলা যাইতে পারে সকর্মক ক্রিয়ার সহযোগেই জীববাচক সামান্য বিশেষ্যপদ কর্তৃকারকে তির্যকরূপ ধারণ করে। এই ঘরে ছাগলে আছে বলি না। কিন্তু ছাগলে ঘাস খায়’ বলা যায়। বলি ‘পোকায় কেটেছে, কিন্তু অকৰ্মক লােগা’ ক্রিয়ার বেলায় ‘পোকা লেগেছে'। তাকে ভূতে পেয়েছে। বলি, ‘ভূত পেয়েছে নয়। পাওয়া ক্রিয়া সকর্মক। । কিন্তু এই সকৰ্মক ও অকৰ্মক শব্দটি এখানে সম্পূর্ণ খাটিবে না। ইহার পরিবর্তে বাংলায় নূতন শব্দ তৈরি করা আবশ্যক। আমরা এ স্থলে সচেষ্টক’ ও ‘অচেষ্টক’ শব্দ ব্যবহার করিব। কারণ প্রচলিত ব্যাকরণ অনুসারে সকর্মক ক্রিয়ার সংস্রবে উহ্য বা ব্যক্তিভাবে কর্ম থাকা চাই কিন্তু আমরা যে শ্রেণীর ক্রিয়ার কথা বলিতেছি। তাহার কৰ্ম্ম না থাকিতেও পারে। ‘বানদের লাফায়” এই বাক্যে ‘বনের’ শব্দ তির্যকরূপ গ্ৰহণ করিয়াছে, অথচ লাফায়’ ক্রিয়ার কর্ম নাই। কিন্তু লাফানো” ক্রিয়াটি আছে এবং ‘থাকে৷” এই দুইটি ক্রিয়ার পার্থক্য চিন্তা করিয়া দেখিলে দেখা যাইবে, আছে। আছে' ক্রিয়ার কর্তৃকারকে তির্যকরূপ স্থান পায় না- “ঘরে মানুষে আছে বলা চলে না। কিন্তু “এ ঘরে কি মানুষে থাকতে পারে।” এরূপ প্রয়োগ সংগত। - ’প্লেগে স্ত্রীলোকেই অধিক মরে’ এ স্থলে মরা ক্রিয়া অচেষ্টক সন্দেহ নাই। ‘বেশি আদর পেলে ভালো মানুষেও বিগড়ে যায়' অধ্যবসায়ের দ্বারা মুখেও পণ্ডিত হতে পারে’, ‘অকস্মাৎ মৃত্যুর আশঙ্কায় বীরপুরুষেও ভীত হয়’ এ-সকল অচেষ্টক ক্রিয়ার দৃষ্টান্তে আমার নিয়ম খাটে না। বস্তুত এই নিয়মে ব্যতিক্রম যথেষ্ট আছে। । কিন্তু 'আছে' ক্রিয়ার স্থলে কর্তৃপদে একার বসে না, এ নিয়মের ব্যতিক্রম এখনাে ভাবিয়া পাই নাই। f