পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፄ O8 রবীন্দ্র-রচনাবলী দিয়ে বলে ওঠে, কেয়া বাৎ! এই অভ্যস্ত কায়দার বেড়ার বাহিয়েও সুরেন্দ্রের অমরসভা আছে, সেই সভায় উর্বশীর যে-নিত্যনূতন নাচ চলে তার ওপরে খাসাহেবের আধিপত্য চলে না। অভ্যাসের আফিমী মীেতাতে যাদের মন ঝিম হয়ে আছে, বন্ধনমুক্ত রসের লীলায় তাদের নেশা ছুটে যায় বলেই তারা রেগে ওঠে। তারা বলে রাসভঙ্গ হােলো। বস্তুত নিয়ম ভঙ্গকেই তারা বলে রসভঙ্গ। বিজ্ঞসমাজে যেমন আচারের ক্রটিকেই বলে ধর্মনাশ ;-ভুলে যায় যে, নিত্য ধর্মের খাতিরেই আচারকে ভাঙতে হয়। অবশ্য আচারের সঙ্গে ধর্মের যেখানে সামঞ্জস্য আছে সেখানে এ কথা খাটে না। যে প্রথার সঙ্গে রসের আন্তরিক প্রণয়, রসিকেরা সেখানে বিচ্ছেদ ঘটাতে ইচ্ছা! दन की । মোট কথা এই যে, গান জিনিসটার পরে দরদ অত্যন্ত বেশি, কেননা বাহ্যিক প্রমাণের দ্বারা ওর রসবিচার চলে না। এইজন্যে আমার গান যখন প্ৰবীণা প্রথার কাছে সর্বদাই মুখনাড়া সহ্য করত। আমার পক্ষ থেকে কখনো তার প্রতিবাদ হয় নি- এমন-কি প্রাচীন কবিবাক্যও প্রতিপক্ষের প্রতি প্রয়োগ করতে নিরস্ত ছিলুম— “অরসিকেষু” ইত্যাদি। মিলটনের মতো “fit though few"-র দাবি জানাই নি— ভবভূতির মতো “কালোেহায়ং নিরবধি বিপুল চ পৃথ্বীর উপর আশাকে প্রসারিত করে সান্তনা লাভের চেষ্টা করি নি। কবিদের এই দম্ভ নৈরাশ থেকেই জেগে ওঠে, স্পর্ধ দ্বারাই তারা অনাদরকে আঘাত করবার চেষ্টা করে- যেহেতু তাদের আর কোনো অস্ত্র নেই। কিন্তু আমি জানি স্পর্ধার দ্বারা কিছু পরিমাণে মনের বঁাজ মেটে কিন্তু তাতে মামলা জিত হয় না, রায়টা অনিশ্চিত থেকেই যায়। তা হলে কথাকাটাকাটি করে লাভ কী!! এমন অবস্থায় আমার গান সম্বন্ধে তোমার লেখাটি পড়ে যেমন বিস্মিত তেমনি খুশি হয়েছি। ওস্তাদ-পাড়ায় তোমার বাড়ি অথচ এ কথা বলতে তোমার বাধল না যে, গানেতে বর্ণসংকর দোষ দোেষই নয়। অর্থাৎ তোমার মতে গানে কেবল দুটি মাত্র জাত আছে, ভালো আর মন্দ। এটা প্রায় নাস্তিকের মতো কথা— আশঙ্কা হচ্ছে পাছে বিচক্ষণদের কাছে তোমার প্রতিপত্তি নষ্ট হয়। আমার গানের পক্ষ নিয়ে তোমার দুঃখলাভ বা সম্মানহানি ঘটে এ আমি ইচ্ছা করি নে। যে বীজ নিজে রোপণ করেছি। তার ফলের দায়িক আমি একলা। তার জন্যে তোমাকে সুদ্ধ যদি দায়িক করি তা হলে চিত্রগুপ্তের খাতায় আমার বিরুদ্ধে ডবল মার্কা পড়বে। অনেক কথা লিখলুম। দেখে ভেবো না। আমার বাজারে কথার টানাটানি নেই। লেখার অজস্রতা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বয়স কেটেছে বাক্যে, তার পরে সুরে, এখন দিনান্তে সময় এসেছে মীেনের। ইতি ১ ভাদ্র ১৩৩৮ R ...আমার গান দেশে অনেকেই সুরে বেসুরে গেয়ে থাকে। কিন্তু যাঁরা সমজদার বলে খ্যাত তঁরা কেউ ওটাকে আমল দেন না। অর্থাৎ আকন্দ ফুলে শিবের পুজো চলে। কিন্তু আকন্দগাছটা থাকে বাগানের বাইরে। আরামেই থাকে, ফ্যাশান-দোরস্ত বাগান-বিলাসীরা ওকে দেখে নাকি সিট্রিকোয় না। ইতিমধ্যে তুমি ওটাকে টেনে আনলে যাচাই ঘরে। তার ফল হবে এই যে, নামজাদা যাচনদাররা বিচলিত হয়ে উঠবে। তার প্রথম লক্ষণ দেখা গেল.পত্রিকায়।. লিখেছেন বহু চেষ্টা করেও রবীন্দ্রনাথের গান তিনি ভালো লাগাতে পারেন নি। তিনি আমার চেয়ে বয়সে ছোটো, আমার তরফ থেকে ঠিক ঐ রকম ব্যক্তিগত যুক্তি তঁর গান সম্বন্ধে প্রয়োগ করা অশোভন হবে।