পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য SSC চ্যাটার্টন র্তাহার শৈশবকাল অবধি এমন সংসর্গে ছিলেন যে, তাহার প্রতিভা কিরূপে স্মৃৰ্তি পাইল ভাবিয়া পাওয়া যায় না। অনুকূল অবস্থায় অনেকের প্রতিভার বীজ অঙ্কুরিত হইতে দেখা যায়, কিন্তু প্রতিকূল অবস্থায় তাহা অতি অল্প লোকের ভাগ্যে ঘটিয়া থাকে। অবস্থা বিশেষে অনুকূল না হইলে অসময়ে শৈশবে প্রতিভার পূর্ণস্ফুর্তি হওয়া এক প্রকার অসম্ভব। পিতার মৃত্যুর তিন মাস পরে ব্রিস্টল নগরে চ্যাটার্টনের জন্ম হয়। র্তাহার মাতা, তাহার ধর্ম মা Mrs Edkins ও তাহার অপেক্ষা দুই বৎসরের জ্যেষ্ঠা এক ভগিনী তাহার শৈশবের সঙ্গী ছিলেন। ইহারা কেহই চ্যাটার্টনকে প্রকৃত প্রস্তাবে চিনিতে পারেন নাই। তঁহার মাতা চ্যাটার্টনকে পাগল মনে করিয়া অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন। প্ৰায় বালক মানে? মাঝে অনেকক্ষণ ধরিয়া আপনার মনে বসিয়া বসিয়া কঁাদিত অথচ কেহ তাহার কোনো কারণ খুজিয়া পাইত না; একবার তাহার এইরূপ চিন্তিত বিষন্ন অবস্থায় Mrs Edkins বিরক্ত হইয়া তাহাকে ভৎসনা করিয়া কহিলেন, “তোর বাপ যদি বাঁচিয়া থাকিতেন, তাহা হইলে তোকে সিধা করিতেন!” শুনিয়া বালক চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “আহা যদি | তিনি বাঁচিয়া থাকিতেন।” বলিয়াই একটি গভীর দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া অনেকক্ষণ নীরবে বসিয়া রহিল। কখনো কখনো অনেকক্ষণ কী কথা ভাবিতে ভাবিতে র্তাহার কপোলে একটি একটি করিয়া অশ্রু বহিয়া পড়িত, তাহা দেখিয়া তাহার মাতা আসিয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিলে বালক যথার্থ কারণ বলিতে চাহিত না! আবার এক-এক সময় কতক্ষণ নিস্তব্ধ বসিয়া থাকিয়া হঠাৎ একটা কলম লইয়া অনর্গল লিখিতে আরম্ভ করিত, কিন্তু কী লিখিত সে বিষয়ে কাহারও কখনো কৌতুহল হয় নাই। এ-সকল যে অসাধারণ অস্ফুর্ত প্রতিভা-উদ্ভূত, তাহা তঁহার মাতা কিরূপে বুঝিবেন বলো ? স্কুলের শিক্ষক তাহাকে একটা গৰ্দভ মনে করিত, তাহার সহপাঠীরা তাহার ভাবগতিক বুঝিতে না পারিয়া অবাক হইত। বাল্যকালে তাহার পাঠে তেমন মন ছিল না- কিন্তু হঠাৎ এক সময়ে এমন তাহার পড়িতে মন বসিয়া গেল যে, শয্যা হইতে গাত্ৰোখান করিয়াই পড়িতে আরম্ভ করিতেন, ও ঘুমাইতে যাইবার সময়ে বহি বন্ধ করিতেন। যখন তিনি পাঠের গৃহে বসিয়া পাঠে মগ্ন থাকিতেন, তখন কিছুতেই আহার করিতে আসিতেন না, অবশেষে Mrs Edkins তাহার বাল্য-প্রিয়তমা Miss Sukey will-এর নাম করিলে তিনি তাড়াতাড়ি উঠিয়া আসিতেন। যখন এমন কেহ তাহার সঙ্গী ছিল না যে তাঁহাকে বুঝিতে পরিবে, তাহার সহিত সমানুভব করিবে, তখন ব্রিস্টলের এক অতি প্ৰাচীন গির্জা ও সেই গির্জার মধ্যস্থিত অতি প্ৰাচীন কালের লোকদের পাষাণ-মূর্তি সকলই তাহার সঙ্গী ছিল। শুনা যায়, প্রায় তিনি সেই গির্জায় যাইতেন ও ক্রীড়া-সহচরদিগের মধ্যে র্তাহার বিশেষ সুহৃদদিগকে কবিতা শুনাইতেন। শৈশবে কী বিষয় ঠাট্টা করিয়া একটা কবিতা লিখিলেন, দুষ্টামি করিয়া পাড়ার একটা দোকানদারের নামে কবিতা লিখিয়া খবরের কাগজে ছাপাইয়া দিলেন। লোকে বলে এগারো বৎসরের সময় তিনি কবিতা লিখিতে শুরু করেন, কিন্তু তাহারও পূর্বে দশ বৎসরের সময় তাহার একটি কবিতা পাওয়া গিয়াছে। কবিতাটি যিশু খৃস্টের পৃথিবীতে অবতরণ সম্বন্ধে। আসলে এ কবিতাটির মূল্য তেমন কিছুই নহে, এ সম্বন্ধে তিনি স্কুলে যাহা পড়িয়াছেন তাহাই ছন্দে গাঁথিয়াছেন মাত্র, তথাপি দশ বৎসরের বালকের কবিতার একটা নমুনা পাঠকদের হয়তো দেখিতে কৌতুহল হইবে। অনুবাদ অবিকল করিবার মানসে অমিত্ৰাক্ষরে লিখিলাম উপর হইতে দেখো আসিছেন মেঘে, বিচারক, বিভূষিত মহিমা ও প্রেমে; } আলোকের রাজ্য দিয়া আনিবারে তারে দ্বিধা হয়ে গেল দেখো শূন্য একেবারে