পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RSQ রবীন্দ্র-রচনাবলী সংগীতের উৎপত্তি ও উপযােগিতা (হর্বাির্ট স্পেনসারের মত) সংগীত ও ভাব’-নামক প্রবন্ধ রচনার পর হর্বাির্ট স্পেনসারের রচনাবলী পাঠ করিতে করিতে cifrēta “The Origin and Function of Music”-TRANKF SKICKR Gri-TKP71 ANOS VOTÈKNING হইয়াছে তাহা আমার মতের সমর্থন করে এবং অনেক স্থলে উভয়ের কথা এক হইয়া গিয়াছে। স্পেনসর সংগীতের শরীরগত কারণ সবিস্তারে আলোচনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, বাঁধা কুকুর যখন দূর হইতে তাহার মনিবকে দেখে, বন্ধনমুক্ত হইবার আশায় অল্প অল্প লেজ নাড়িতে থাকে। মনিব যতই তাহার কাছে অগ্রসর হয়, ততই সে অধিকতর লেজ নাড়িতে এবং গা দুলাইতে থাকে। মুক্ত করিয়া দিবার অভিপ্ৰায়ে মনিব তাহার শিকলে হাত দিলে এমন সে লাফালাফি ‘আরম্ভ করে যে, তাহার বাঁধন খোলা বিষম দায় হইয়া উঠে। অবশেষে যখন সম্পূর্ণ ছাড়া পায় তখন খুব খানিকটা ইতস্তত ছুটাছুটি করিয়া তাহার আনন্দের বেগ সামলায়। এইরূপ আনন্দে বা বিষাদে বা অন্যান্য মনােবৃত্তির উদয়ে সকল প্রাণীরই মাংসপেশিতে ও অনুভবজনক স্নায়ুতে উত্তেজনার লক্ষণ প্রকাশিত হয়। মানুষেও সুখে হাসে, যন্ত্রণায় ছটফট করে। রাগে ফুলিতে থাকে, লজ্জায় সংকুচিত হইয়া যায়। অর্থাৎ, শরীরের মাংসপেশিসমূহে মনোবৃত্তির প্রভাব তরঙ্গি ত হইতে থাকে। মনোবৃত্তির অতিরিক্ত তীব্রতায় আমরা অভিভূত হইয়া পড়ি বটে, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও সাধারণ নিয়মস্বরূপে বলা যায় যে, শরীরের গতির সহিত হৃদয়ের বৃত্তির বিশেষ যোগ আছে। তাহা যেন হইল, কিন্তু সংগীতের সহিত তাহার কী যোগ ? আছে। আমাদের কণ্ঠস্বর কতকগুলি বিশেষ মাংসপেশি দ্বারা উৎপন্ন হয়; সে-সকল মাংসপেশি শরীরের অন্যান্য পেশিসমূহের সঙ্গে সঙ্গে মনোভাবের উদ্রেকে সংকুচিত হইয়া যায়। এই নিমিত্ত আমরা যখন হাসি তখন অধরের সমীপবতী মাংসপেশি সংকুচিত হয়, এবং হাস্যের বেগ গুরুতর হইলে তৎসঙ্গে-সঙ্গে কণ্ঠ হইতেও একটা শব্দ বাহির হইতে থাকে। রোদনেও ঠিক সেইরূপ। এক কথায় বিশেষ বিশেষ মনোভাব- উদ্রেকের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নানা মাংসপেশি ও কঠের শব্দনিঃসারিক মাংসপেশিতে উত্তেজনার আবির্ভাব হয়। মনোভাবের বিশেষত্ব ও পরিমাণ -অনুসারে কণ্ঠস্থিত মাংসপেশিসমূহ সংকুচিত হয়; তাহাদের বিভিন্ন প্রকারের সংকোচন অনুসারে আমাদের শব্দযন্ত্র বিভিন্ন আকার ধারণ করে; এবং সেই বিভিন্ন আকার অনুসারে শব্দের বিভিন্নতা সম্পাদিত মাত্ৰৰ দেখা যাইতেছে আমাদের কানিস্ত বিভিন্ন স্বর বিভিন্ন মনােবৃত্তির শরীরগত আমাদের মনের ভাব বেগবান হইলে আমাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ হয়, নহিলে অপেক্ষাকৃত মৃদু। থাকে। কথােপকথনে তেমন সুর থাকে না। বেগবান মনােভাবে সুর আসিয়া পড়ে। রোধের একটা সুর আছে খেদের একটা সুর আছে, উল্লাসের একটা সূরা আছে। সচরাচর আমরা যে স্বরে কথাবার্তা কহিয়া থাকি তাহাই মাঝামাঝি স্বর। সেই স্বরে কথা, কহিতে আমাদের বিশেষ পরিশ্রম করিতে হয় না। কিন্তু তাহার অপেক্ষা উচু বা নিচু স্বরে কথা কহিতে হইলে কণ্ঠস্থিত মাংসপেশির বিশেষ পরিশ্রমের আবশ্যক করে। মনোভাবের বিশেষ উত্তেজনা হইলেই তবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক মাঝামাঝি সুর ছাড়াইয়া উঠি অথবা নামি। অতএব দেখা যাইতেছে, বেগবান মনোবৃত্তির প্রভাবে আমরা আমাদের স্বাভাবিক কথাবার্তার সুরের বাহিরে যাই। । সচরাচর যখন শান্তভাবে কথাবার্তা কহিয়া থাকি, তখন আমাদের কথার স্বর অনেকটা