পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8obዖ রবীন্দ্র-রচনাবলী । না। একটুখানি সুযোগের প্রত্যাশায় যাহারা দাঁতের পাটি সমস্তটা বাহির করিয়া তাহদের সহিত আত্মীয়তা করিতে যাইতে পারে তাহাদিগকে দেখিলে নিতান্তই ঘূণা বোধ হয়। তোমরা বলিবে, এ-সকল কথা বালকেরই মুখে শোভা পায়, ইহা পাকা কাজের লোকের । মতো কথা হইল না। কাৰ্য উদ্ধার করিতে হইলে আত বিচার করিয়া চলা পোষায় না। বড়ো বড়ো sentimentাগুলি ঘরের শোভা সম্পাদনের জন্য, সচ্ছল অবস্থায় বড়ো বড়ো ছবির মতো তাহাদিগকে ঘরে টাঙইয়া রাখিয়াছিলাম; কিন্তু যখন গাঁঠের কড়িতে টান পড়িল, তখন Rinct Viricts aritics sistice Retic highest bidder-O's fift frn আসিলাম, ইহাতে আর দোষ হইয়াছে কী? Political Economy-র মতে ইহাতে দোষ কিছুই মাথায় জোগায়। কিন্তু তাই যদি হইল, তোমরাই যদি এমন কাজ করিতে পার ও এমন কথা বলিতে পাের, তবে ভারতবর্ষ এতকাল তাহার নিজের ক্ষীরািটুকু সরটুকু খাওয়াইয়া তোমাদিগকে পোষণ করিল কেন? যাহারা প্রত্যহ একমুষ্টি উদরান্নের জন্য প্ৰাণপণ করিয়া মরে, এতবড়ো ভয়ংকর কাজের লোক হওয়া বরঞ্চ তাহাদিগকে শোভা পায়, বড়ো বড়ো sentiment বরঞ্চ তাহাদিগের নিকটেই মহাৰ্ঘ বলিয়া গণ্য হইতে পারে। কিন্তু তোমরা যে জন্মাবধি এতকাল এত অবসর পাইয়া আসিয়াছ একটা মহৎ sentiment চর্চা করিতেও কি পারিলে না? তবে আর কুলীন ধনী পরিবারদিগকে দেশ কেন পোষণ করিতেছে? তাহারা না খাটিবে, না তাহাদের অবকাশের সদব্যবহার করিবে। দেশের সমস্ত স্বাস্থ্য শোষণ করিয়া মস্ত মস্ত জমকালো বিস্ফোটকের মতো শোভা পাওয়াই কি তাহাদের একমাত্র কাজ ! আমাদের বিশ্বাস ছিল, কুলক্ৰমাগত সচ্ছল সম্রান্ত অবস্থা উদারতা ও মহত্ত্ব সঞ্চায়ের সাহায্য করে- এরাপ কুলীনেরা সামান্য হীন সুবিধার খাতির অগ্রাহা করে ও মানের কাছে প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করে— দেশের সভ্রম তাহারাই রাখে; আর তাই যদি না হয়, একটু মাত্ৰ কাল্পনিক সুবিধার আশা পাইলেই আমনি তাহার যদি নীচত্ব করিতে প্ৰস্তুত হয়, নিজের অপমান ও দেশের অপমানকে গুলি-পাকাইয়া অমানবদনে গলাধঃকরণ করিয়া ফেলিতে পারে তবে তাহারা যত শীঘ্ৰ সরিয়া পড়ে ততই হাত জমির মধ্যে ঘুরিয়া মরিতেছে, কিছুই উন্নতি হয় নাই, এক পা অগ্রসর হইতে পারে নাই! মান-সন্ত্ৰম-মহত্ত্ব সমস্তই ঘানিতে ফেলিয়া কেবল তেলই বাহির করিতে হইবে! বোধ করি স্বদেশকে ও বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডকে তোমাদের ওই ঘানিতে ফেলিতে পার যদি একটুখানি তেল বাহির হয়! সমস্ত জীবন তোমাদের ওই ঘানি-দেবতাকে প্ৰদক্ষিণ করিয়া মরো ও উহার কঁ্যাচু কঁ্যাচু শব্দে জগতের সমস্ত সংগীত ডুবিয়া যাক! তোমরা হিন্দু, তোমরা জাতিভেদ মানিয়া থাক। আমরণ তোমাদের সন্তানের যদি বিবাহ না হয় তথাপি সহস্ৰ সুবিধা সত্ত্বেও একটা ফিরিঙ্গির সন্তানের সহিত তাহার বিবাহ দাও না, কেন ? না শাস্ত্ৰে নিষেধ আছে। কিন্তু আর-একটি অলিখিত শাস্ত্র এবং মহত্ত্বর জাতিভেদ আছে, যদি সে শাস্ত্ৰজ্ঞান ও সে সহৃদয়তা থাকিত, তবে একটুখানি সুবিধার আশায় গোটাকতক অ্যাংলোইন্ডিয়নের সহিত মিলনসূত্রে বদ্ধ হইতে পারিতে না! সকলই প্রজাপতির নির্বন্ধ বলিতে হইবে। নহিলে তোমরা যত শ্যাম তনু, ক্ষীণ, ক্ষুদ্রগণ ঘড়ির চেনটি পরিয়া ললিত হাস্যে মধুর সম্ভাষণে ওই বড়ো বড়ো গোরাদের আদর কড়িতে গিয়াছ ও কৃতকাৰ্য হইয়াছ ইহা কী করিয়া সম্ভব হইল। এ তো প্রকাশ্যে, এ তৰু ভালো! কিন্তু বিশ্বাস হয় না লোকে কানাকানি করিতেছে, কালায় গোরায় গোপনে নাকি গান্ধৰ্ব মিলন চলিতেছে! শুনিতেছি নাকি কানে কানে কথা, হাতে হাতে টেপাটেপি ও পরস্পর সুবিধার মালাবদল হইতেছে। সুবিধাই বা কতটুকু। তোমরা নিজে কিছু কম লোক নও। রাজ-সরকারে তোমাদের যথেষ্ট মান-মর্যাদা, খ্যাতি-প্রতিপত্তি আছে। তাহা ছাড়া, তোমরা নিতান্ত মুখচোরাও নাও যে, তোমাদের