পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Net 86ነዔ কখনো আছে কখনো নাই তাহা আমরা হািদয়ের সহিত প্রার্থনা করিতে পারি না। কারণ আমরা জানি না সেটা কী? আমরা শুনিয়াছি তাহা ভালো জিনিস, বিশ্বাস হইয়াছে তাহা পাইলে ভালো হয়. কিন্তু তাহা আমাদের আবশ্যক ও উপযোগী কি না তাহা বলা শক্ত। ঘোড়া মূল্যবান পদার্থ এবং ঘোড়া চড়িলে আনন্দ হয়। একজন ছেলে এ কথা শুনিয়া বাপের কাছে আবদার করিতে পারে যে “হে বাবা আমাকে একটা ঘোড়া দাও।” বাবা বলিল, “কোন রে। তোর আবার এ বাতিক গেল কেন!’ সে বলিল, “কোন বাবা, তুমি]] তো বলে ঘোড়া খুব ভালো, ঘোড়ায় চড়তে ভালো লাগে।” তখন বাবা মনে করে, এ ছেলেটা ঘোড়ার ব্যবহার জানে না। তাই ঘোড়ায় চড়তে এত ব্যস্ত। কিন্তু যদি ঘোড়ার পিঠে একে চড়িয়ে দিই তা হলে ওঠবার জন্যে যত আগ্রহ প্ৰকাশ করেছিল নাববার জন্যে ততোধিক আগ্রহ প্ৰকাশ করবে।.স্বাধীনতা সম্বন্ধে আমাদের এইরূপ] ঘটিতে পারে। স্বাধীনতা কী তাহার স্বাদ জানিয়া এবং তাহা Realize করিয়া যদি স্বাধীনতা চাহিতাম তাহা হইলে লোকে নিদেন এইটে বুঝিত যে ঠিক জিনিসটা চাহিতেছে বটে। কিন্তু কানে-শোনা স্বাধীনতাব নামে আমরা] যে কী চাহিতেছি তাহা আমরা নিজেই জানি না। যথার্থ স্বাধীনতা পাইলে হয়তো আমরা চীৎকার করিয়া] বলিয়া উঠি ‘দোহাই, তোমার কুত্তা বুলাইয়া লও।' কিছু আশ্চর্য নাই। স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় স্বভাব। আমরা চিরদিন শাস্ত্রের অধীন, রাজার অধীন, গুরুর অধীন, গুরুজনের অধীন— সেটা তো একটা দৈব ঘটনামাত্র নয় তাহার] মূল কারণ আমাদের মর্মের মধ্যে নিহিত। আমাদের দেশের এত অল্প পরিমাণ লোক শিক্ষিত এবং অল্পশিক্ষিত- যে আমরা সমস্ত জাতির দায় স্কন্ধে লইতে পারি না। আমরা ক'জনে মিলিয়া যাহা চাহিতেছি তাহ সমস্ত জাতির পক্ষে বাস্তবিক ভালো কি মন্দ (তাহা)। আমরা কি জানি ? অশিক্ষিত লোকদের ভালোমন্দ সুবিচার করিবার ক্ষমতা আমরা অনেকটা হারাইয়া ফেলিয়াছি। শিক্ষিত লোকে নিজের অবস্থা বিচার করিয়া স্থির করিতে পারে যে বাল্যবিবাহ মন্দ, কিন্তু যখনি... [হইতে মনে করে বর্তমান অবস্থায় সমস্ত ভারতবর্ষের পক্ষে তাহা মন্দ তখনি ভ্ৰমে পতিত হয়। এবং অশিক্ষিত]] লোকদের মীেন অবসরের মধ্যে সে যদি বকিয়া বকিয়া বাল্যবিবাহের বিপক্ষে একটা সাধারণ আইন জারী কিরিয়া লয়। তবে সে কি গুরুতর অন্যায় করে? আমাদের গুরুতর দায়িত্ব বিস্মৃত হইয়া আমরা সমস্ত জাতির নামে যখন] আবদার করিতে থাকি তখন বোধ করি মুহুর্তের জন্য আমাদিগকে সচেতন করিয়া দেওয়া আবশ্যক। [এখন] |্যক শিক্ষা বিস্তার করা- অনেক অবস্থার অনেক লোক অনেকদিন হইতে শিক্ষা লাভ করিয়া যে বিষয়ে নিজের]. মত প্ৰকাশ করে তাহাকে দেশের মত বলিয়া ধরিয়া লওয়া যাইতে পারে। ইংরাজি শিক্ষা দ্বারা প্ৰথম প্ৰথম [আমাদের জাতীয়স্বভাবের এক প্রকার বাহ্যিক বিপর্যয় দৃষ্ট হয়। তখন হঠাৎ মনে হয় ইহারা [বুঝি] সত্যই ভারতবষীয় বিশেষ ভােব পরিহার করিয়াছে এবং ইংরাজি institution সকলের উপযোগী হইয়াছে। অনেক দিন ধরিয়া অনেক লোকের মধ্যে শিক্ষা বিস্তুত হইলে তবে এ বিষয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারা যাইবে। কেবল কতকগুলি লোকের মধ্যে ইংরাজি শিক্ষা প্রচলিত হইয়া কীরূপে যে দেশের. অবস্থার পরিবর্তন হইতে পারে, তাহা আমি জানি না। [ অনেকে বলিতে ] পারেন যে ইংলন্ডেই কি আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই শিক্ষিত? কিন্তু তবে [সেখানে কী করে] লোকেরা অশিক্ষিত লোকদের প্রতিনিধিস্বরূপ নিযুক্ত হইতে পারেন? কিন্তু আমার বিবেচনায় ইংলন্ডের শিক্ষিত অশিক্ষিত লোকের সহিত আমাদের দেশের শিক্ষিত অশিক্ষিত লোকের অনেক প্ৰভেদ আছে। তাহাদের শিক্ষা ও উন্নতির মূল কারণ তাঁহাদের সমাজ তাঁহাদের অবস্থার মধ্যেই নিহিত। সুতরাং তাঁহাদের শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে জাতিগত ভেদ নাই, শিক্ষার নৃত্যুনাধিক্যের ভেদমাত্র। জাতীয় স্বাধীনতা সম্বন্ধে তাঁহাদের সকলেরই একটা স্বাভাবিক ধারণা আছে- তবে কাহারো মনে স্পষ্ট কাহারো মনে অস্পষ্ট। আমাদের দেশে শিক্ষিত অশিক্ষিতের মধ্যে সম্পূর্ণ আলো-অন্ধকারের ভেদ। একের কথা আরেকের পক্ষে বিদেশীয়। উভয়ের মধ্যে