পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

विदिक्ष GGA মুঠিতে থাকি, ও তামাক টানিয়া তাহার উত্তপ্ত ধোঁয়া গােঁফের শাখায় শাখায় সন্ধারিত আজ গোঁফের কী মহত্ত্ব আমাদের মনের সম্মুখে সহসা উদঘাটিত হইয়া গেল। ভাবের প্রবাহ অনুসরণ করিয়া করিয়া আমরা গোঁফের গঙ্গোত্রী শিখরের উপরে গিয়া উপনীত হইয়াছি। আজ ভূতত্ত্বশাস্ত্ৰ অনুসারে পৃথিবীর যুগপরম্পরা অতিক্রম করিয়া, দ্রব অবস্থায় পৃথিবী যে চতুর্দিকব্যাপী ঘন মেঘনীড়ের মধ্যে আচ্ছন্ন ছিল, ভাবজগতের সেই আদিম শুম্মফমেঘনীড়ের মধ্যে বিজ্ঞানবলে গিয়া উপস্থিত হইয়াছি, মহৎ ভাবে সর্বাঙ্গ শিহরিয়া উঠিয়াছে। ব্যাসদেবের যে অত্যন্ত বৃহৎ এক জোড়া গোঁফ ছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই; কারণ যে গোঁফে তিনি বৃহৎ মহাভারতের অষ্টাদশ পর্বের আঠারোটা ডিম নয়টা নয়টা করিয়া দুইদিকে অদৃশ্যভাবে ঝুলাইয়া বহন করিয়া বেড়াইতেন সে বড়ো সাধারণ গোঁফ হইবে না। ক্রমওয়েল সাহেবের গোঁফে ইংলন্ডের বর্তমান পার্ল্যামেন্টের ডিম যখন বুলিত, তখন কেহ দেখিতে পায় নাই, আজ দেখো, সেই পার্ল্যামেন্ট ডিম ভাঙিয়া মস্ত ডাগর হইয়া কঁ্যাক কঁ্যাক করিয়া বেড়াইতেছে। পিতামহ ব্ৰহ্মার আর কিছু থাক না থাক, চার মুখে চার জোড়া খুব বড়ো বড়ো গোঁফ অনন্ত আকাশ আচ্ছন্ন করিয়াছিল, ইহা কি কেহ অস্বীকার করিতে পরিবে? নাহিলে চরাচর কোথায় থাকিত । হায় হয়, যাহারা গোঁফ কামায়, তাহারা জানে না। কী ভয়ানক কাজ করিতেছে। হয়তো এক জোড়া গোঁফের সঙ্গে সঙ্গে একটা দেশের স্বাধীনতা কামাইয়া ফেলা হইল! একটা ভাষার সাহিত্য কামাইয়া ফেলা হইল! হয়তো কাল প্ৰত্যুষেই আমি মানব সমাজে এক ভূমিকম্প উপস্থিত করিতে পারিতাম, কিন্তু আজ সন্ধ্যাবেলায় গোঁফ কামাইয়া ফেলিলাম, ও তাহার সঙ্গে সঙ্গে একটা সমাজের ভূমিকম্প কামাইয়া ফেলিলাম! কবি গ্রে সাহেব কবরস্থানে গিয়া মুক, গীেরবহীন মৃত । গ্রাম্য মিলটনদের স্মরণ করিয়া বিলাপ করিয়াছেন, কিন্তু তিনি যদি নাপিতের ক্ষৌরশালায় গিয়া । কবির দিব্যচক্ষে ছিন্ন গোফরাশির মধ্যে শত শত ধূলিধূসরিত সভ্যতা, সাধু সংকল্প ও মহৎ উদ্দেশ্যের ভূণহত্যা দেখিতে পাইতেন, ধূলিতে লুণ্ঠমান নীরব সংগীত শিশু, অন্ধুরে বিদলিত মহত্ত্বের কল্পবৃক্ষ সকল দেখিতে পাইতেন, তবে না জানি কী বলিতেন। আমি যখন কোনো বড়ো লোক দেখি, তখন র্তাহার গোঁফজোড়াটা দেখিয়াই সম্রামে অভিভূত হইয়া পড়ি। তাহার সহিত তর্ক করিবার সময় তিনি যদি গোঁফে চাড়া লাগান তো ভয়ে তর্ক বন্ধ করিয়া ফেলি! মনে মনে একবার কল্পনা করিয়া দেখি, যেন, বর্তমান কাল অত্যন্ত ভীত হইয়া ওই গোঁফের দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, ভাবিতেছে, না জানি কোন একটা বলবান ভবিষ্যৎ-বাচ্ছা! কাল-পরশুর মধ্যে ডিম্ব ভেদ করিয়া গরুড়-পরাক্রমে ওই গোঁফের ভিতর দিয়া হুস করিয়া বাহির হইয়া পড়িবে, ও বর্তমান কালটাকে সিংহাসন হইতে হেঁচুড়াইয়া আনিয়া নিজে তাহার উপরে গঢ় হইয়া বসিবে। মনে মনে এই কামনা করি যে নাপিতের ক্ষুর কখনো যেন ও গোফিজোড়া স্পর্শ না করে। নৈয়ায়িক মহাশয়েরা গোটকতক তীক্ষ্ণ-চকু ক্ষুদ্ৰচক্ষু হিংস্র পাখি পুষিয়া রাখিয়াছেন, তাহারা কোনো কালে নিজে ডিম পাড়িতে পারে না, কেবল পরের নীড়ে খোঁচা মারিয়া ও পরের শাবককে ঠোকরাইয়া বেড়ায়। এইরূপে ইহঁরা অনেক ভালো ভালো জাতের ভাবগুলিকে বধ করিয়া থাকেন। মনে মনে বিষম অহংকার। কিন্তু ইহা হয়তো জানেন না, যদি এই শাবক বৈচারিরা নিতান্তই শিশু অবস্থায় এরূপ খোঁচা না খাইত ও পুষ্ট হইয়া কিছু বড়ো হইতে পারিত, তবে এই নৈয়ায়িক হিংস্র পক্ষীগণ ইহাদের কাছে ঘেঁসিতে পারিত না। আমার সামান্য গোফ ইহঁতে আজ এই যে একটি পাখি বাহির হইয়াছে, ইহার জন্ম সংবাদ পাইয়াই অমনি চারি দিক ইহঁতে নৈয়ায়িক পক্ষীগণ ইহার চারিদিকে চ্যা চ্যা করিয়া আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। কেহ বা ইতিহাসে ঠোঁট শানইয়া আসিয়াছেন, কেহ বা পুরাণের আগায় ঠোঁট ঘষিয়া আসিয়াছেন, কেহ