পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ov রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী যথার্থ প্ৰতিকার করা হয় না। পুলিস বিল, রি বিল, প্রভৃতি আইন সম্বন্ধে আমাদের আপত্তি আমরা বিদেশীভাষায় টাউনহলে প্ৰকাশ করিয়া থাকি, তদ্বারা সে-সকল বিল সংশোধন হইতেও পারে। কিন্তু বিল সংশোধন অপেক্ষা দেশ-সংশোধন ঢের বড়ো কাজ। এই সকল বিলে দেশের যে প্রজা-সাধারণের শুভাশুভ নির্ভর করিতেছে, সেই প্ৰজাদিগকে বিলগুলির উদ্দেশ্য এবং আমাদের সকলের কর্তব্য বুঝাইয়া দেওয়া আবশ্যক। তাহারা কী অধিকার পাইল এবং তাহাদের নিকট হইতে কী অধিকার প্রত্যাহরণ করা হইল ইহা তাহাদিগকে স্পষ্ট করিয়া বুঝাইয়া দিলে যে উপকার হইবে ইংরাজ রাজসভায় দরবার করিয়া সে পরিমাণ উপকার হইবে না। কেবল ইহাই নয়— দেশের রোগনিবারণ, শিক্ষাবিস্তার, ধনবৃদ্ধি, শান্তিরক্ষা, অন্যায়প্ৰতিকার প্রভৃতি সমস্ত কাজে ঢের বেশি তন্ন তন্ন করিয়া মনোযোগ দেওয়া যাইতে পারে। গবর্মেন্টকে কর্তব্যশিক্ষা দান করিবার বিস্তুত আয়োজনে সমস্ত উদ্যম নিয়োগ না করিয়া নিজেদের অদূরবতী কর্তব্যপালনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখা একান্ত আবশ্যক হইয়াছে। উৎসবে ব্যসনেচৈব দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ। দারিদ্র্যে, দুর্ভিক্ষে রাজত্বারে আমরা আপন দেশের লোকের সাহায্যে আপনারা উপস্থিত থাকিয়া স্বজাতিই স্বজাতির সর্বপ্রধান বান্ধব ইহাই প্রমাণ করা আমাদের প্রধান কাজ। পার্লামেন্টের সহিত বন্ধুত্বস্থাপনচেষ্টাও মন্দ কাজ নহে- কিন্তু দেশের লোকের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপনের ন্যায় ফল তাহতে পাইব না। হিন্দু ও মুসলমান আমাদের একটা মস্ত কাজ আছে হিন্দু-মুসলমানে সংখ্যবন্ধন দৃঢ় করা। অন্য-দেশের কথা জানি না। কিন্তু বাংলাদেশে যে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৌহার্দ্য ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। বাংলায় হিন্দু অপেক্ষা মুসলমানের সংখ্যা বেশি এবং হিন্দু-মুসলমানে প্রতিবেশিসম্বন্ধ খুব ঘনিষ্ঠ। কিন্তু । আজকাল এই সম্বন্ধ ক্রমশ শিথিল হইতে আরম্ভ করিয়াছে। একজন সভ্রান্ত বাঙালি মুসলমান । বলিতেছিলেন বাল্যকালে তাহারা তাহদের প্রতিবেশী ব্ৰাহ্মণ পরিবারদের সহিত নিতান্ত । আখীয়ভাবে মেশামেশি করিতেন। তাঁহাদের মা-মাসিগণ ঠাকুরানীদের কোলে পিঠে মানুষ হইয়াছেন। কিন্তু আজকাল শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে নূতন হিন্দুয়ানি অকস্মাৎ নারদের টেকি অবলম্বন করিয়া অবতীর্ণ হইয়াছে। তাহারা নবোপার্জিত আৰ্য অভিমানকে সজারুর শলাকার মতো আপনাদের চারি দিকে কল্টকিত করিয়া রাখিয়াছেন; কাহারো কাছে ঘেঁসিবার জো নাই। হঠাৎবাবুর বাবুরানার মতোর্তাহাদের হঠাৎ হিন্দুয়ানি অত্যন্ত অস্বাভাবিক উগ্রভাবে প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে। উপন্যাসে নাটকে কাগজে পত্রে অকারণে বিধমীদের প্রতি কটাক্ষপাত করা হইয়া থাকে। আজকাল অনেক মুসলমানেও বাংলা শিখিতেছেন এবং বাংলা লিখিতেছেন- সুতরাং স্বভাবতই এক পক্ষ হইতে ইট এবং অপরপক্ষ হইতে পােটকেল বর্ষণ আরম্ভ হইয়াছে। কোথায় তুকীর সুলতান তিনশত পাচক রাখিয়াছেন ইহা লইয়া স্লেচ্ছদিগকে তিরস্কার ও হিন্দুয়ানির বড়ই করিয়া আপন পড়ার প্রতিবেশীদের সহিত বিরোধের সূত্রপাত করিলে তাহাতে হিন্দুদের, মাহাত্ম্য নহে, পর্যন্ত ক্ষুদ্রতারই পরিচয় দেওয়া হয়। যদি আমাদের ধর্মের এমন কোনো গুণ থাকে যাহাতে আমাদের পুরাতন পাড়ার লোককেও আপন করিয়া লইতে বাধা দেয়। তবে সে ধর্মের জন্য अश्कॉन कब्रियान कॉनन किई नधि ना।