পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

›ፃ• রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহার কিসের আহলাদ ! মহেন্ত্র তো তাহাকে সেই দ্বাচকে মেধি। তাহা হউক, কিন্তু তাহার জন্ত মহেন্দ্র ষে গৃহ পরিত্যাগ করিয়া বিদেশে কষ্ট পাইতেছে এ আত্মমানির যন্ত্রণা হইতে অব্যাহতি পাইল— যে কারণেই হউক, মহেন্দ্র যে বিদেশে গিয়া কষ্ট পাইতেছে ইহা রজনীর অতিশয় কষ্টকর হইয়াছিল। দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ কাশীর স্টেশনে করুণা-সংক্রান্ত যে-সমস্ত ঘটনা ঘটিতেছিল, একজন ভদ্রলোক তাহা সমস্ত পর্যবেক্ষণ করিতেছিলেন। স্বরূপকে দেখিয়া তিনি কেমন লজ্জিত ও সংকুচিত হইয়া সরিয়া গিয়াছিলেন। যখন দেখিলেন সকলে চলিয়া গেল এবং করুণা মূছিত হইয়া পড়িল তখন তিনি তাহাকে একটা গাড়িতে তুলিয়। তাহার বাসাবাড়িতে লইয়া যান— তাহার কোথায় যাইবার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু যাওয়া হইল না। করুণার মুখ দেখিয়া, এমন কে আছে যে তাহাকে দোষী বলিয়া সন্দেহ করিতে পারে ? মহেন্দ্রও তাহাকে সন্দেহ করে নাই। বলিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম— সেই ভদ্রলোকটি মহেন্দ্র । লাহোর হইতে আসিবার সময় একবার কাশীতে আসিয়াছিলেন । কলিকাতার ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করিতেছিলেন, এমন সময়ে এই-সমস্ত ঘটনা ঘটে। করুণা চেতনা পাইলে মহেন্দ্র তাহাকে তাহার সমস্ত বৃত্তাস্ত জিজ্ঞাসা করিলেন। মহেন্দ্রের মুখে এমন দয়ার ভাব প্রকাশ পাইতেছিল যে, করুণা শীঘ্রই সাহস পাইল। কাদিতে কাদিতে তাহার সমস্ত বৃত্তান্ত র্তাহাকে কহিল এবং ঠিক সে যেমন করিয়া ভবিকে জিজ্ঞাসা করিত তেমন করিয়া মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিল, কেন নরেন্দ্র তাহার উপর জমন রাগ করিল। মহেক্স বালিকার সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিল না— কিন্তু এই প্রশ্ন শুনিয়া তাহার চক্ষে জল আসিয়াছিল। নরেন্দ্রকে মহেঙ্গ বেশ চেনে, সে সমস্ত ঘটনা বেশ বুঝিতে পারিল। পণ্ডিতমহাশয় যে কেন তাহাকে আমন করিয়া ফেলিয়া গেলেন তাহাও করুণা ভাবিয়া পাইতেছিল না, অনেকক্ষণ ভাবিয়া ভাবিয়া তাহাও মহেন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করিল। মহেন্দ্র তাহার যথার্থ কারণ বাহা বুঝিয়াছিলেন তাহ গোপন করিয়া নানারূপে বুঝাইয়া দিলেন। এখন করুণাকে লইয়া যে কী করিবে মহেন্দ্র তাহাই ভাবিতে লাগিল। অবশেষে স্থির হইল তাহাজের বাড়িতেই লইয়া বাইবে। মহেন্দ্র করুণার নিকট তাহার বাড়িয় বর্ণনা করিল। কহিল— তাহাঙ্গের বাড়ির সামনেই একটি প্রাচীর-দেওয়া বাগান আছে, বাগানের মধ্যে একটি ক্ষুত্র পুষ্করিণী আছে, পুষ্করিণীর উপরে একটি বাধানো শানের