পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১৮ - রবীন্দ্র-রচনাবলী তবে শিব। তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা করে পৃখিবীটি বস্তুত ধেমন, অর্থাৎ নানা অসমান অংশে বিভক্ত, তাকে তেমনি করেই জানবার সাহস থাকা চাই। ছাট-দেওয়া সত্য এবং ঘর-গড় সামগ্রস্তের প্রতি আমার লোভ নেই। আমার লোভ আরো বেশি, তাই আমি অসামঞ্জস্তকেও ভয় করি নে। যখন বয়স অল্প ছিল তখন নানা কারণে লোকালয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ ছিল না, তখন নিভৃতে বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গেই ছিল আমার একান্ত যোগ। এই ৰোগটি সহজেই শান্তিময়, কেননা এর মধ্যে দ্বন্ধ নেই, বিরোধ নেই, মনের সঙ্গে মনের— ইচ্ছার সঙ্গে ইচ্ছার সংঘাত নেই। এই অবস্থা ঠিক শিশুকালেরই সত্য অবস্থা। তখন অন্তঃপুরের অন্তরালে শান্তি এবং মাধুর্যেরই দরকার। বীজের দরকার মাটির বুকের মধ্যে বিরাট পৃথিবীর পর্দার আড়ালে শাস্তিতে রস শোষণ করা। ঝড়বৃষ্টিরৌত্রছায়ার ঘাতপ্রতিঘাত তখন তার জন্যে নয়। তেমনি এই বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে প্রচ্ছন্ন অবস্থায় ধর্মবোধের ষে আভাস মেলে সে হচ্ছে বৃহতের আস্বাদনে । এইখানে শিশু কেবল তাকেই দেখে যিনি কেবল শাস্তম, তারই মধ্যে বেড়ে ওঠে ৰিনি কেবল সত্যম্। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে নিজের প্রকৃতির মিলট অনুভব করা সহজ, কেননা সে দিক থেকে কোনো চিত্ত আমাদের চিত্তকে কোথাও বাধা দেয় না। কিন্তু এই মিলটাতেই আমাদের তৃপ্তির সম্পূর্ণতা কখনোই ঘটতে পারে না । কেননা আমাদের চিত্ত আছে, সেও আপনার একটি বড়ো মিল চায়। এই মিলট বিশ্বপ্রকৃতির ক্ষেত্রে সম্ভব নয়, বিশ্বমানবের ক্ষেত্রেই সম্ভব । সেইখানে আপনাকে ব্যাপ্ত করে আপনার বড়ো-আমির সঙ্গে আমরা মিলতে চাই। সেইখানে আমরা আমাদের বড়ো পিতাকে, সখাকে, স্বামীকে, কর্মের নেতাকে, পথের চালককে চাই। সেইখানে কেবল আমার ছোটোআমিকে নিয়েই যখন চলি তখন মন্থন্তত্ব পীড়িত হয় ; তখন মৃত্যু ভয় দেখায়, ক্ষতি বিমৰ্ষ করে, তখন বর্তমান ভবিষ্কংকে হনন করতে থাকে, দুঃখশোক এমন একান্ত হয়ে ওঠে যে তাকে অতিক্রম করে কোথাও সাম্বন দেখতে পাই নে। তখন প্রাণপণে কেবলই সঞ্চয় করি, ত্যাগ করবার কোনো অর্থ দেখি নে, ছোটো ছোটো ঈর্ষাভেবে মন জর্জরিত হয়ে ওঠে— তখন— শুধু দিনযাপনের শুধু প্রাণধারণের মানি শরমের ডালি, নিশি নিশি রুদ্ধ ঘরে ক্ষুন্ত্রশিখা স্তিমিত দীপের, श्वाशि उ कानि।