পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9ፃ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু সত্যকে সংকীর্ণ করে কখনোই মানুষ চিরকাল সমুদ্ধি লাভ করতে পারে না । এক জায়গায় এসে তাকে ঠেকতেই হবে ; যদি কেবল উপরিতলের মাটি উর্বরা হয় তবে বনস্পতি দ্রুত বেড়ে ওঠে ; কিন্তু অবশেষে তার শিকড় নীরস তলায় গিয়ে ঠেকে, তখন হঠাৎ একদিন তার ডালপালা মুষড়ে যেতে আরম্ভ করে। মানুষের কর্তবাবুদ্ধি স্বজাতির সীমার মধ্যে আপন পূর্ণখাদ্য পায় না, তাই হঠাৎ একদিন সে আপনার প্রচুর ঐশ্বর্ষের মাঝখানেই দারিদ্র্যে এসে উত্তীর্ণ হয়। তাই ষে যুরোপ নেশনস্থষ্টির প্রধান ক্ষেত্র সেই যুরোপ আজ নেশনের বিভীষিকায় আর্ত হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ এবং সন্ধির ভিতর দিয়ে যে নিদারুণ দুঃখ যুরোপকে আলোড়িত করে তুলেছে তার অর্থ হচ্ছে এই যে, নেশনরূপের মধ্যে মানুষ অাপন সত্যকে আবৃত করে ফেলেছে ; মানুষের আয় বলছে, "অপাবৃণু – আবরণ উদ্‌ঘাটন করে । মনুষ্যত্বের প্রকাশ আচ্ছন্ন হয়েছে বলে স্বজাতির নামে পাপাচরণ সম্বন্ধে মানুষ এতদিন এমন স্পষ্ট ঔদ্ধত্য করতে পেরেছে, এবং মনে করতে পেরেছে যে, তাতে তার কোনো ক্ষতি হয় নি, লাভই হয়েছে। অবশেষে আজ নেশন যখন আপনার মুঘল আপনি প্রসব করতে আরম্ভ করেছে তখন যুরোপে নেশন আপনার স্মৃতি দেখে আপনি আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে। নূতন যুগের বাণী এই যে, আবরণ পোলো, হে মানব, আপন উদার রূপ প্রকাশ করো। আজ নববর্ষের প্রথম দিনে আমাদের আশ্রমের মধ্যে আমরা সেই নবযুগের বাণীকে অস্তরের মধ্যে গ্রহণ করব । আমাদের আশ্রমকে আজ আমরা সর্ব প্রকার ভেদবুদ্ধির আবরণ-মুক্ত করে দেখি, তা হলেই তার সত্যরূপ দেখতে পাব। আমাদের এখানে নানা দেশ থেকে নানা জাতির অতিথি এসেছে। তার যদি অস্তরের মধ্যে কোনো বাধা না পায় তবে তাদের এই আসার দ্বারাতেই আপনি এখানে নবযুগের একটি মিলনতীৰ্থ তৈরি হয়ে উঠবে। বাংলাদেশে নানা নদী এলে সমুদ্রে পড়েছে, সেই বহু নদীর সমুদ্রসংগম থেকেই বাংলাদেশ আপনি একটি বিশেষ প্রকৃতি লাভ করে তৈরি হয়ে উঠেছে । আমাদের আশ্রম যদি তেমনি আপন হৃদয়কে প্রসারিত করে দেয় এবং যদি এখানে আগন্থকেরা সহজেই আপনার স্থানটি পায় ত৷ হলে এই আশ্রম সকলের সেই সম্মিলনের দ্বারা আপনিই আপনার সত্যরূপকে লাভ করবে। তীর্থযাত্রীরা যে ভক্তি নিয়ে আসে, যে সত্যদৃষ্ট নিয়ে আসে, তার দ্বারাই তারা তীর্থস্থানকে সত্য করে তোলে। আমরা স্বারা এই আশ্রমে এসেছি, জামর এখানে যে সত্যকে উপলব্ধি করব বলে শ্রদ্ধাপূর্বক প্রত্যাশা করি সেই শ্রদ্ধার দ্বারা সেই প্রত্যাশা দ্বারাই সেই সত্য এখানে সমুজ্জল হয়ে প্রকাশ পাবে। আমরা এখানে কোন মস্ত্রের রূপ দেখব বলে নিয়তু প্রত্যাশা করব । সে মন্ত্র হচ্ছে এই যে-– ‘বত্র বিশ্বং