পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

थुप्टे & et বারে ইতিহাসে তার বাণীর* অবমাননা করেছে, রক্তের চিহ্নের দ্বারা ধরাতল রঞ্জিত করে দিয়েছে— তারা বিণ্ডকে এক বার নয়, বার-বার ক্রুশেতে বিদ্ধ করেছে। সেই খৃষ্টান নাস্তিকদের অবিশ্বাস থেকে বিশুকে বিচ্ছিন্ন করে তাকে আপন শ্রদ্ধার দ্বারা দেখলেই যথার্থ ভাবে সন্মান করা হবে । খৃষ্টের আত্মা তাই আজি চেয়ে অাছে। বড়ো বড়ো গির্জায় তার বাণী প্রচারিত হবে বলে তিনি পথে পথে ফেরেন নি, কিন্তু বার অন্তরে ভক্তিরস বিশুদ্ধ হয়ে যায় নি তারই কাছে তিনি তার সমস্ত প্রত্যাশা নিয়ে একদিন উপনীত হয়েছিলেন। তিনি সেদিনকার কালের সব চেয়ে অখ্যাত দরিত্র অভাজনদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বিশ্বের অধিপতিকে বলেছিলেন যে “পিতা নোহসি’— তুমি আমাদের পিতা। মানুষ জীবন ও মৃত্যুকে বিচ্ছিন্ন করে দেখে, এই দুয়ের মধ্যে সে একের মিল দেখে না। যেমন তার দেহে পিঠের দিকে চোখ নেই বলে কেবল সামনেরই অঙ্গকে মেনে নেও বিষম স্কুল, তেমনি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে আপাত অনৈক্যকেই সত্য বলে জানলে জীবনকে খণ্ডিত করে দেখা হয়। এই মিথ্যা মায়া থেকে ধারা মুক্তিলাভ ক’রে অমৃতকে সর্বত্র দেখেছেন তাদের আমরা প্রণাম করি। তারা মৃত্যুর দ্বারা অমৃতকে লাভ করেছেন, এই মর্তলোকেই অমরাবতী স্বজন করেছেন। অমর ধামের তেমন এক যাত্রী একদিন পৃথিবীতে অমর লোকের বাণী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন, সেই কথা স্মরণ করে আমরাও যেন মৃত্যুর তমোরাশির উপর অমৃত আলোর সম্পাত দেখতে পাই। রাত্রিতে স্থৰ অস্তমিত হলে মূঢ় যে সে ভাবে যে, আলো বুঝি নির্বাপিত হল, স্বষ্টি লোপ পেল। এমন সময় সে অন্তরীক্ষে চেয়ে দেখে ষে স্থৰ্য অপসারিত হলে লোকলোকান্তরের জ্যোতিরধাম উচ্চাসিত হয়ে উঠেছে – মহারাজার এক দরবার ছেড়ে আর-এক দরবারে আলোর সংগীত ধ্বনিত হচ্ছে । সেই সংগীতে আমাদেরও নিমন্ত্রণ বেজে উঠেছে। মহা আলোকের মিলনে বেন আমরা পূর্ণ করে দেখি। জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানকার এই অখণ্ড যোগস্থত্ৰ যেন আমরা না হারাই। যে মহাপুরুষ তার জীবনের মধ্যেই অমৃতলোকের পরিচয় দিয়েছিলেন, তার মৃত্যুর দ্বারা অমৃতরূপ পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল, আজ তার মৃত্যুর অন্তর্নিহিত সেই পরম সত্যটিকে যেন আমরা স্পষ্ট আকারে দেখতে পাই । ২৫ ডিসেম্বর ১৯২৩ k চৈত্র ১৩৩• শান্তিনিকেতন