পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লীপ্রকৃতি ' دده বেড়াচ্ছে-বংশের বােগের বঙ্গ তবে এই মাটর সঙ্গে আমাদের মিলন সার্ধক হবে। যদি কেবল হাওয়ায় এবং বাম্পে সমস্ত আয়োজন ঘুরে বেড়ায় তবে নৃতম যুগের নববর্ষ। বৃথা এল। বর্ষণ ৰে হচ্ছে না তা নয়, কিন্তু মাটিতে চাব দেওয়া হয় নি। ভাবের রসধারা যেখানে গ্রহণ করতে পারলে ফসল ফলবে, সে দিকে এখনো কারে দৃষ্টি পড়ছে না। সমস্ত দেশের ধূসর মাটি, এই শুষ্ক তপ্ত দগ্ধ মাটি, তৃষ্ণায় চৌচির হয়ে ফেটে গিয়ে কেঁদে উর্ধ্বপানে তাকিয়ে বলছে, ‘তোমাদের ঐ বা-কিছু ভাবের সমারোহ, ঐ বা-কিছু জ্ঞানের সঞ্চয়, ও তো আমারই জন্তে— আমাকে দাও, আমাকে দাও । সমস্ত নেবার জন্তে আমাকে প্রস্তুত করে। আমাকে যা দেবে তার শতগুণ ফল পাবে।" এই আমাদের মাটির উত্তপ্ত দীর্ঘনিশ্বাস আজ আকাশে গিয়ে পৌচেছে, এবার স্ববৃষ্টির দিন এল বলে, কিন্তু সেইসঙ্গে চাষের ব্যবস্থা চাই যে । গ্রামের উন্নতি সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করব আমার উপর এই ভার। অনেকে অন্তত মনে মনে আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তুমি কে হে, শহরের পোস্যপুত্র, গ্রামের খবর কী জান। আমি কিন্তু এখানে বিনয় করতে পারব না। গ্রামের কোলে মানুষ হয়ে বাশবনের ছায়ায় কাউকে খুড়ো কাউকে দাদা বলে ডাকলেই যে গ্রামকে সম্পূর্ণ জানা যায় এ কথা সম্পূর্ণ মানতে পারি নে। কেবলমাত্র অলস নিশ্চেষ্ট জ্ঞান কোনো কাজের জিনিস নয়। কোনো উদ্বেপ্তের মধ্য দিয়ে জ্ঞানকে উত্তীর্ণ করে নিয়ে গেলে তবেই সে জ্ঞান যথার্থ অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়। আমি সেই রাস্ত দিয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণে অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তার পরিমাণ অল্প হতে পারে, কিন্তু তবুও সেটা অভিজ্ঞতা, স্বতরাং তার মূল্য বহুপরিমাণ অলস জ্ঞানের চেয়েও বেশি। আমার দেশ আপন শক্তিতে আপন কল্যাণের বিধান করবে এই কথাটা যখন কিছুদিন উচ্চৈঃস্বরে আলোচনা করা গেল তখন বুঝলুম কথাটা র্যারা মানছেন তারা স্বীকার করার বেশি আর কিছু করবেন না, আর ধারা মানছেন না তারা উদ্যম-সহকারে বা-কিছু করবেন সেটা কেবল আমার সম্বন্ধে, দেশের সম্বন্ধে নয়। এইজন্ত দায়ে পড়ে নিজের সকল প্রকার অযোগ্যতা সত্ত্বেও কাজে নামতে হল। যাতে কয়েকটি গ্রাম নিজের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক উন্নতি প্রভৃতির ভার সমবেত চেষ্টায় নিজের গ্রহণ করে আমি সেই চেtায় প্রবৃত্ত হলুম। দুই-একটি শিক্ষিত ভদ্রলোককে ডেকে বললুম, ‘তোমাদের কোনো দুঃসাহসিক কাজ করতে হবে না- একটি গ্রামকে বিনা যুদ্ধে দখল করে।" এজন্ত আমি সকলপ্রকার সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিলুম এবং সৎপরামর্শ দেবারও ক্রাট করি নি। কিন্তু আমি কৃতকার্য হতে পারি নি। তার প্রধান কারণ, শিক্ষিত লোকের মনে অশিক্ষিত জনসাধারণের প্রতি একটা