পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( ԳՎջ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাওয়ায় এক জায়গায় একটা খা হয়, বর্ষার সময় হাটু পর্যন্ত কাজ হয়, ৰাওয়া-জালায় বড়ো কষ্ট হত। তার ছু পাশে দুখানি বড়ো গ্রাম, ছ ঘণ্টা কাজ করলে এটা ভরাট করা যেতে পারে। কিন্তু তারা বললে, তার হু ঘণ্টা কাজ করবে, আর স্বারা কুষ্টিয়া থেকে কি অন্ত জায়গা থেকে আসবে তারা কিছু করবে না— ভারা সুবিধা পাবে! নিজে শত অস্থবিধা ভোগ করবে তৰু পরের স্থবিধা সহ করতে পারবে না— দূরের লোক তাদের ঠকালো ক্রমাগত এই ভয়। অন্তে পরিশ্রম না করে আমার পরিশ্রমের সুবিধা ভোগ করবে, আমার পরিশ্রমের ফলে সকলের কল্যাণ হবে— এটা তারা সহ করতে পারে না। না করতে পারার কারণ এই— কর্মের পুরস্কার মনে মনে কল্পনা । নিজের পুরস্কার কামনা ক'রে কর্মের প্রতি ষে ঝোক জন্মে সে কর্ম হীনকর্ম। সর্বসাধারণের কল্যাণ হোক, নাহয় আমার পরিশ্রম হল, এ কথা তারা বুঝতে পারে না। দুঃখ দিয়ে এ কথা বুঝিয়ে দিতে হবে। বলতে হবে, মরতে হয় তারা মরুক, মৃত্যুদূতের কানমলা খেয়ে যদি তাদের চৈতন্ত হয় তাও ভালো। গ্রামে গ্রামে ঔষধ পথ্য দিয়ে গোপালবাবু সরে যাবেন এ কথা তিনি বলেন নি বটে— বাকে সেবা বলে তিনি তাই করছেন, বেশি দিন তা করবেন না। যেই তারা বুঝবে এই প্রণালীতে উপকার হয়, অমনি ওঁরা সরে আসবেন তাদের উপর ভার দিয়ে । গায়ে না গেলে বুঝতে পারবেন না ম্যালেরিয়া কী ভীষণ প্রভাব বিস্তার করেছে। অনেকের যকৃৎ-পিলেতে পেট ভর্তি হয়ে আছে, স্বতরাং ম্যালেরিয়া দূর করতে হবে— বেশি করে বুঝাবার দরকার নাই। আমরা অনেকে জানি ম্যালেরিয়া কিরকম গোপনে ধীরে ধীরে মানুষকে জীবন্মত করে রাখে। এ দেশে অনেক জিনিস হয় না ; অনেক জিনিস আরম্ভ করি, শেষ হতে চায় না ; অনেক কাজেই দুর্বলতা দেখতে পাই— পরীক্ষা করলে দেখা যায় ম্যালেরিয়া শরীরের মধ্য থেকে তেজ কেড়ে নিয়েছে। চেষ্টা করবার ইচ্ছাও হয় না। সকলেই জানেন বাংলাদেশের কাজকর্মে পশ্চিম থেকে লোক আসে। যেখানে বাংলার জেলে ছিল সেখানে হিন্মুখানি জেলে এসেছে। বাংলাদেশে ম্যালেরিয়ায় প্রাণ মিস্তেজ, কাজেই উৎসাহ নেই। প্রভুর বলেন বটে, চালাকি করছে, ঘন ঘন তামাক খাচ্ছে, মজুরের কাজ করে না, আফিলে কেরানিয়া কাজে মন দেয় না। জোয়ান জোয়ান সাহেব, তোমরা বুঝবে কী করে- ওর চালাকি করে না ; ম্যালেরিয়ায় বার জীর্ণ, নিয়ত কাজ করবার, কাজে মন দেবার শক্তি তাদের নাই ; মশার কামড় খেয়ে ওদের এরকম অবস্থা হয়েছে। কিছুদিন এ দেশে থাকে, এটা ভালো করে বুঝতে পারবে। তাই বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে না, মহাপুৰুষের দিকে তাকিয়ে থেকে