পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ । ৪৭৩ ঝড়ের-ঝাপট-খাওয়া ছেড়া-পাল ভাঙা-মাস্তুল জাহাজের মতো ভাবখানা ; চোখ দুটাে কেমনতরো, চুল উস্কোখুষ্কো, মুখ রোগ, কাপড় ময়লা । t শচীশ বলিল, দামিনী, তোমাকে চলিয়া যাইতে বলিয়াছিলাম— আমার ভুল হইয়াছিল, আমাকে মাপ করে। দামিনী হাত জোড় করিয়া বলিল, ও কী কথা আপনি বলিতেছেন ? 救 না, আমাকে মাপ করে । আমাদেরই সাধনার সুবিধার জন্য তোমাকে ইচ্ছামতো ছাড়িতে বা রাখিতে পারি এত বড়ো অপরাধের কথা আমি কখনো আর মনেও আনিব না। কিন্তু তোমার কাছে আমার একটি অনুরোধ আছে, সে তোমাকে রাখিতেই হইবে । দামিনী তখনই নত হইয়া শচীশের দুই পা ছুইয়া বলিল, আমাকে হুকুম করে। তুমি। শচীশ বলিল, আমাদের সঙ্গে তুমি যোগ দাও, অমন করিয়া তফাত হইয়া থাকিয়ো না । দামিনী কহিল, তাই যোগ দিব, আমি কোনো অপরাধ করিব না । এই বলিয়া সে আবার নত হইয়া পা ছুইয়া শচীশকে প্রণাম করিল, এবং আবার বলিল, আমি কোনো অপরাধ করিব না । (* পাথর আবার গলিল। দামিনীর যে অসহ দীপ্তি ছিল তার আলোটুকু রহিল, তাপ রহিল না। পূজায় অৰ্চনায় সেবায় মাধুর্ষের ফুল ফুটিয়া উঠিল। যখন কীর্তনের আসর জমিত, গুরুজি আমাদের লইয়া যখন আলোচনায় বসিতেন, যখন তিনি গীত বা ভাগবত ব্যাখ্যা করিতেন, দামিনী কখনো এক দিনের জন্য অনুপস্থিত থাকিত না। তার সাজসজ্জারও বদল হইয়া গেল। আবার সে তার তসরের কাপড়খানি পরিল ; দিনের মধ্যে যখনই তাকে দেখা গেল মনে হইল সে যেন এইমাত্র স্নান করিয়৷ আসিয়াছে । গুরুজির সঙ্গে ব্যবহারেই তার সকলের চেয়ে কঠিন পরীক্ষা । সেখানে সে যখন নত হইত তখন তার চোখের কোণে আমি একটা রুদ্র তেজের ঝলক দেখিতে পাইতাম। আমি বেশ জানি, গুরুজির কোনো হুকুম সে মনের মধ্যে একটুও সহিতে পারে না, কিন্তু তার সব কথা সে এতদূর একান্ত করিয়া মানিয়া লইল যে একদিন তিনি তাকে বাংলার সেই বিষম আধুনিক লেখকের দুর্বিষহ রচনার বিরুদ্ধে সাহস