পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ । 8\νά তাই যখন দেখি শরীরটা কষ্ট পাইতেছে তখন এত সহজে আমাদের_মন কাদিয়া উঠে । আমি বলিলাম, তাই যারা কেবল মন লইয়া থাকে শরীরের অভিভাবক তোমাদের তারা চোখেই দেপিতে পায় না। দামিনী দুপ্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, পায় না বৈকি! তারা আবার এমন করিয়া দেখে যে সে একটা অনাস্থষ্টি । মনে মনে বলিলাম, সেই অনাস্থষ্টিটার পরে তোমাদের লোভের সীমা নাই । ওরে ও শ্ৰীবিলাস, জন্মান্তরে যেন স্বষ্টিছাড়ার দলে জন্ম নিতে পারিস এমন পুণ্য কর । \S) সেদিন নদীর চরে শচীশ দামিনীকে আমন একটা শক্ত ঘা দিয়া তার ফল হইল, দামিনীর সেই কাতর দৃষ্টি শচীশ মন হইতে সরাইতে পারিল না। তার পর কিছুদিন সে দামিনীর পরে একটু বিশেষ যত্ন দেখাইয়া অনুতাপের ব্রত যাপন করিতে লাগিল । অনেক দিন সে তো আমাদের সঙ্গে ভালো করিয়া কথাই কয় নাই, এখন সে দামিনীকে কাছে ডাকিয়া তার সঙ্গে আলাপ করিতে লাগিল ৷ যে-সব তার অনেক ধ্যানের অনেক চিস্তার কথা সেই ছিল তার আলাপের বিষয় । দামিনী শচীশের ঔদাসীন্যকে ভয় করিত না, কিন্তু এই যত্নকে তার বড়ো ভয় । সে জানিত এতটা সহিবে না, কেননা এর দাম বড়ো বেশি। একদিন হিসাবের দিকে যেই শচীশের নজর পড়িবে, দেখিবে খরচ বড়ো বেশি পড়িতেছে, সেইদিনই বিপদ। শচীশ অত্যন্ত ভালো ছেলের মতে বেশ নিয়মমতো স্নানাহার করে, ইহাতে দামিনীর বুক দুরদুর করে, কেমন তার লজ্জা বোধ হয়। শচীশ অবাধ্য হইলে সে যেন বঁাচে । সে মনে মনে বলে, সেদিন তুমি আমাকে দূর করিয়া দিয়াছিলে ভালোই করিয়াছ । আমাকে যত্ন এ যে তোমার আপনাকে শাস্তি দেওয়া । এ আমি সহিব কী করিয়া ? দামিনী ভাবিল, দূর হোক গে ছাই, এখানেও দেখিতেছি মেয়েদের সঙ্গে সই পাতাইয়া আবার আমাকে পাড়া ঘুরিতে হইবে। একদিন রাত্রে হঠাৎ ডাক পড়িল, বিত্র । দামিনী ! তখন রাত্রি একটাই হইবে কি দুটাই হইবে শচীশের সে খেয়ালই নাই। রাত্রে শচীশ কী কাগু করে তা জানি না— কিন্তু এটা নিশ্চয়, তার উৎপাতে এই ভূতুড়ে বাড়িতে ভূতগুলা অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে । 母 १॥७२।।