পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক (ta (t করতে আমি প্রস্তুত আছি । তাদের শর্করকণা গলাধঃকরণ করে এবং তাদের বিবরের মধ্যে হাত পা ছড়িয়ে কোনোক্রমে আমরা জীবনযাপন করতে রাজি আছি, যদি এতেও তারা কিছুমাত্র উন্নত হয়। তার উন্নতি চায় না— তারা নিজের শর্করা নিজে খেতে এবং নিজের বিবরে নিজে বাস করতে চায়, তার কারণ তার পিপড়ে, নিতান্তই পি পড়ে। কিন্তু আমরা যখন ডেঞে তখন আমরা তাদের উন্নতি দেবই, এবং তাদের শর্করা আমরা খাব ও তাদের বিবরে আমরা বাস করব-– আমরা এবং আমাদের ভাইপো, ভাগ্নে, ভাইঝি ও শ্বালকবৃন্দ। যদি জিজ্ঞাস কর তাদের শর্কর আমরা কেন খাব এবং তাদের বিবরে কেন বাস করব তবে তার প্রধান কারণ এই দেখাতে পারি যে, তারা পি পড়ে এবং আমরা ডেঞে ! দ্বিতীয়, আমরা নিঃস্বার্থভাবে পি পড়েদের উন্নতিসাধনে ব্ৰতী হয়েছি, অতএব আমরা তাদের শর্কর খাব এবং বিবরেও বাস করব। তৃতীয়, আমাদের প্রিয় ডাইভূমি ত্যাগ করে আসতে হবে, সেইজন্য, সেই দুঃখ নিবারণের জন্য, শর্করা কিছু অধিক পরিমাণে খাওয়া আবশ্যক। চতুর্থ, বিদেশে বিজাতির মধ্যে বিচরণ করতে হবে, নানা রোগ হতে পারে— তা হলে বোধ করি আমরা বেশি দিন বঁচিব না— হায়, আমাদের কী শোচনীয় অবস্থা ! অতএব শর্কর খেতেই হবে, এবং বিবরেও যতটা স্থান আছে সমস্ত আমরা এবং আমাদের শু্যালকেরা মিলে ভাগাভাগি করে নেব । পি পড়েরা যদি আপত্তি করে তবে তাদের বলব, অকৃতজ্ঞ ! যদি তার শর্করা থেতে এবং বিবরে স্থান পেতে চায তবে ডাই ভাষায় তাদের স্পষ্ট বলব, তোমরা পিপড়ে, ক্ষুদ্র, তোমরা পিপীলিকা। এর চেয়ে আর প্রবল যুক্তি কী আছে! তবে পি পড়ের থাবে কী ? তা জানি নে। হয়তো আহার এবং বাসস্থানের অকুলান হতেও পারে, কিন্তু এটা তাদের ধৈর্য ধরে বিবেচনা করা উচিত যে, আমাদের দীর্ঘপদম্পর্শে ক্রমে তাদের পদবৃদ্ধি হবার সম্ভাবনা আছে। শৃঙ্খলা এবং শাস্তির কিছুমাত্র অভাব থাকবে না। তারা ক্রমিক উন্নতি লাভ করুক এবং আমরা ক্রমিক শর্করা খাই, এমনি একটা বন্দোবস্ত থাকলে তবেই শৃঙ্খলা এবং শাস্তি রক্ষা হবে, না হলে তুমুল বিবাদের আটক কী ?– মাথায় গুরুভার পড়লে এতই বিবেচনা করে চলতে হয় । শর্করাভাবে এবং অতিরিক্ত শান্তি ও শৃঙ্খলার ভারে যদি পিপড়ে জাতি মারা পড়ে ? তা হলে আমরা অন্যত্র উন্নতি প্রচার করতে যাব— কারণ, আমরা ডেঞে জাতি, উচ্চপদের প্রভাবে অত্যন্ত উন্নত । চৈত্র ১২৯২