পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূরবী যারা আমার সাব-সকালের গানের দীপে জ্বালিয়ে দিলে আলো আপন হিয়ার পরশ দিয়ে ; এই জীবনের সকল সাদা কালো যাদের আলো-ছায়ার লীলা ; সেই যে আমার আপনি মানুষগুলি নিজের প্রাণের স্রোতের পরে আমার প্রাণের ঝর্না নিল তুলি ; তাদের সাথে একটি ধারায় মিলিয়ে চলে, সেই তো আমার আয়ু, নাই সে কেবল দিন-গণনার পাজির পাতায়, নয়। সে নিশাস-বায়ু । তাদের বাচায় আমার বাচা আপন সীমা ছাড়ায় বহু দূরে ; নিমেষগুলির ফল পেকে যায় নানা দিনের সুধার রসে পুরে ; অতীত কালের আনন্দরূপ বর্তমানের বৃন্ত-দোলায় দোলে--- গৰ্ভ হতে মুক্ত শিশু তবুও যেন মায়ের বক্ষে কোলে বন্দী থাকে নিবিড় প্রেমের বাধন দিয়ে । তাই তো যখন শেষে একে একে আপনি জনে সূৰ্য্য-আলোর অন্তরালের দেশে আঁখির নাগাল এড়িয়ে পালায়, তখন রিক্ত শীণ জীবন মম। শুষ্ক রেখায় মিলিয়ে আসে। বর্ষশেষের নিঝরিণী-সম শূন্য বালুর একটি প্রান্তে ক্লান্ত বারি স্রস্ত অবহেলায় । তাদের হাতে হাত দিয়ে তুই গান গেয়ে নে থাকতে দিনের আলো— বলে নে, “ভাই, এই যা দেখা, এই যা ছোওয়া এই ভালো এই ভালো । এই ভালো আজ এ সংগমে কান্নাহাসির গঙ্গা-যমুনায় ঢেউ খেয়েছি, ডুব দিয়েছি, ঘট ভরেছি, নিয়েছি বিদায় । এই ভালো রে প্রাণের রঙ্গে এই অসঙ্গ সকল অঙ্গে মনে পুণ্য ধরার ধুলো মাটি ফল হাওয়া জল তৃণ তরুর সনে । এই ভালো রে ফুলের সঙ্গে আলোয় জাগা, গান গাওয়া এই ভাষায়— তারার সাথে নিশীথ রাতে ঘুমিয়ে পড়া নূতন প্রাতের আশায় ।” বিজয়ী তখন তারা দৃপ্ত বেগের বিজয়—ব্রথে ছুটিছিল বীর মত্ত অধীর, রক্তধূলির পথ-বিপথে ; তখন তাদের চতুর্দিকেই রাত্ৰিবেলার প্রহর যত স্বপ্নে-চলার পথিক-মাতো,