পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

on Stig SSS 8 পূরবী শুকায়ে পড়িয়া গেছে ; মধ্যাহ্নের কপোতকাকলি তারি পরে ক্লান্ত ঘুম চাপা দিয়ে এল গেল চলি কতদিন ফিরে ফিরে । তব কালো নয়নের দিঠি মোর প্রাণে লিখেছিল প্ৰথম প্রেমের সেই চিঠি লজাভয়ে ; তোমার সে হৃদয়ের স্বাক্ষরের ‘পরে চঞ্চল আলোকছায়া কত কাল প্রহরে প্রহরে বুলায়ে গিয়েছে তুলি, কত সন্ধ্যা দিয়ে গেছে ঐকে তারি পরে সোনার বিস্মৃতি, কত রাত্রি গেছে রেখে অস্পষ্ট রেখার জালে আপনার স্বপনলিখন তাহারে আচ্ছন্ন করি। প্রতিমুহূর্তটি প্রতিক্ষণ বাকাচোরা নানা চিত্রে চিন্তাহীন বালকের প্রায় আপনার স্মৃতিলিপি চিত্তপটে এঁকে ঐকে যায়, লুপ্ত করি পরস্পরে বিস্মৃতির জাল দেয় বুনে । সেদিনের ফাল্লুনের বাণী যদি আজি এ ফায়ুনে ভুলে থাকি, বেদনার দীপ হতে কখন নীরবে অগ্নিশিখা নিবে গিয়ে থাকে। যদি, ক্ষমা কোরো। তবে । তবু জানি, একদিন তুমি দেখা দিয়েছিলে বলে গানের ফসল মোর এ জীবনে উঠেছিল। ফলে, আজও নাই শেষ ; রবির আলোক হতে একদিন ধ্বনিয়া তুলেছে তার মর্মবাণী, বাজায়েছে বীন তোমার আঁখির আলো | তোমার পরশ নাহি আর, কিন্তু কী পরশমণি রেখে গেছ অন্তরে আমার— বিশ্বের অমৃতছবি আজিও তো দেখা দেয় মোরে ক্ষণে ক্ষণে— অকারণ আনন্দের সুধাপাত্র ভীরে আমারে করায় পান । ক্ষমা কোরো যদি ভুলে থাকি । তবু জানি একদিন তুমি মোরে নিয়েছিলে ডাকি হৃদি-মাঝে ; আমি তাই আমার ভাগ্যরে ক্ষমা করি— যত দুঃখে যত শোকে দিন মোর দিয়েছে সে ভরি সব ভুলে গিয়ে । পিপাসার জলপাত্র নিয়েছে সে মুখ হতে, কতবার ছলনা করেছে হেসে হোসে, ভেঙেছে বিশ্বাস, অকস্মাৎ ডুবায়েছে ভরা তরী তীরের সম্মুখে নিয়ে এসে— সব তার ক্ষমা করি । আজ তুমি আর নাই, দূর হতে গেছ তুমি দূরে, বিধুর হয়েছে সন্ধ্যা মুছে-যাওয়া তোমার সিন্দূরে, সঙ্গীহীন এ জীবন শূন্যঘরে হয়েছে শ্ৰীহীন, সব মানি- সব চেয়ে মানি, তুমি ছিলে একদিন । SÖ %