পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতক। সমাজে তো উঠতে হবে সেটা কি কেউ ভাব । ওকে ছাড়লে পাত্র কোথায় পাব ।” মা বললে, “কেন, ওই যে চাটুজ্যেদের পলিন, নাই বা হল কুলীন সোনার টুকরো ছেলে । এক-পাড়াতে থাকে ওরা- ওরই সঙ্গে হেসে খেলে মেয়ে আমার মানুষ হল ; ওকে যদি বলি আমি আজই এখখনি হয় রাজি ।” ... বাপ বললে, “থামো, ওরা আছে সমাজের সব তলায় | বামুন কি হয় পাইতে দিলেই গলায় ? দেখতে শুনতে ভালো হলেই পাত্ৰ হ’ল ! ব্রাধে ! স্ত্রাবুদ্ধি কি শাস্ত্রে বলে সাধে ।” যেদিন ওরা গিনি দিয়ে দেখলে কনের মুখ সেদিন থেকে মঞ্জলিকার বুক প্ৰতি পালের গোপন কাটায় হল রক্তে মাখা । মায়ের স্নেহ অন্তর্যামী, তার কাছে তো রায় না কিছুই ঢাকা ; মায়ের ব্যথা মেয়ের ব্যথা চলতে খেতে শুতে ঘরের আকাশ প্রতিক্ষণে হানছে যেন বেদনা-বিদ্যুতে | আটলতার গভীর গর্ব বাপের মনে জাগে— সুখে দুঃখে দ্বেযে রাগে ধর্ম থেকে নড়েন। তিনি নাই হেন দৌর্বল্য ! তার জীবনের রথের চাকা চলল লোহার বাধা রাস্তা দিয়ে প্রতিক্ষণেই, কোনোমতেই ইঞ্চি-খানেক এদিক-ওদিক একটু হবার জো নেই । তিনি বলেন, তার সাধনা বড়োই সুকঠোর ; আর কিছু নয়, শুধুই মনের জোর ; অষ্টবক্র জমদগ্নি প্রভৃতি সব ঋষির সঙ্গে তুল্য, মেয়েমানুষ বুঝবে না তার মূল্য । অন্তঃশালা অশ্রু নদীর নীরব নীরে অবশেষে বৈশাখে এক রাতে মঞ্জলিকার বিয়ে হল পঞ্চাননের সাথে । বিদায়বেলায় মেয়েকে বাপ বলে দিলেন মাথায় হস্ত ধরি, “হও তুমি সাবিত্রীর মতো এই কামনা করি ।” NR NS